নিরুত্তাপ উদ্বোধনী ম্যাচ!: সৌদির জন্য ‌'ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি' অবস্থা

জুবায়ের হাসান :
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০১৮ ০৮:০২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭০৫ বার।

স্বাগতম ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ। সৌদি আরব বনাম রাশিয়া। এক আকর্ষণহীন নিয়ম রক্ষার ম্যাচ দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ পর্ব শুরু। সৌদি আরব বিশ্বকাপে চান্স পেলেও সে আসলে আহামরি কোনো দল নয়। এই দেশটি ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করে। ’৯৪-এর USA বিশ্বকাপে সৌদি আরব দারুন খেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যায়। কিন্তু এরপর থেকে দলটি এ পর্যন্ত যতবারই খেলেছে তাতে তেমন কোনো সাফল্য নেই। মহাদেশ ভিত্তিক কোটা পদ্ধতি না থাকলে, সৌদি আরব বিশ্বকাপে খেলার সুযোগই পেতো না। এই কথাটা এক রকম গ্যারান্টি দিয়েই বলা যায়। দেশটি বিশ্বকাপের মূল পর্বে অংশ নিতে পেরেছে অনেকটা একদল ভেড়ার মধ্যে বাঘ হয়ে। খেলতে এসে মাঠ যখন সত্যিকারের বাঘ দেখে তখন পলাই পালাই করে। বিশ্বকাপের মূল পর্বের আসরে চান্স পাওয়াটাকেই দেশটি বিরাট সাফল্য হিসাবে গণ্য করে। এমতাবস্থায় সৌদি আরব রাশিয়ার বিপক্ষে জয়ের উদ্দেশ নিয়ে তো খেলবেই না, বরং কিভাবে নব্বই মিনিটি দ্রুত পার করা যায় এবং কত কম গোল খাওয়া যায় সেই উদ্দেশ্য নিয়েই মাঠে নামবে। যদিও সৌদি আরব খেলার ফরমেশন ৪-৩-৩ রেখছে, কিন্তু মনে হয় রাশিয়ার বিপক্ষে এই আক্রমণাত্মক কৌশলে যাবে না। আক্রমণাত্মক খেলতে গেলে হালি অথবা ডজনখাকে গোল খাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বিরাট পরাজয় ঘটলে আবার দেশে ফিরে রাজদণ্ডের মুখোমুখি হয়োর আশঙ্কাও থেকে যায়। যেমনটা ইরাক ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে ঘটেছিলো। বিশ্বকাপের মূল পর্বে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বৈরাচার সাদ্দাম পুত্রদ্বয় উদে ও কুশে মিলে ইরাকি খেলোয়াড়দেরকে বন্দী করে নির্যাতন করেছিলেন। কাজে কাজেই সৌদি বাদশাহ্্র সামনেও ঝুঁকি নেয়া যাবে না। ‘গোলে মালে কেটে যায় কত দিন’-এর মতো করেই রাশিয়ার বিপক্ষে খেলতে হবে। সৌদির আরেকটা বড় সমস্যা ঘন ঘন কোচ বদল। সম্ভবত বিদেশী কোচের সাথে খেলোয়াড় ও কর্তৃপক্ষের ভাষাগত ও জীবনাচারগত পার্থক্যই এর কারণ। একবার তো আরব-আমিরাতের কোচ অভিমান করে বলেই দিয়েছিলেন, রোজা রাখলে ফুটবলে উন্নতি হবে কিভাবে?

যাহোক, সৌদির বিপক্ষে রাশিয়াও তেমন কোনো শক্তিশালী দল নয়। রাশিয়া নামক দেশটি বিশ্বকাপে প্রবেশ করেছে ১৯৯৪ সালে। এর আগে সে ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। সে সময় ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে এবং ১৯৬৬ সালে সেমিফাইনালে (চতুর্থস্থান) খেলে সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু ভেঙ্গে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন নতুন রাশিয়া হয়ে ১৯৯৪ থেকে এ পর্যন্ত যতবার বিশ্বকাপে খেলেছে, তাতে কোনোবারই দ্বিতীয় রাউ-ে উঠতে পারেনি। তাছাড়া দেশটি একবার বিশ্বকাপে চান্স পায় তো পরের বার আর পায় না। প্রতিবেশি অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের শক্তির তুলনায় রাশিয়া একটি চিতা শাবক। দলটি খেলার ফরমেশন সাজিয়েছে ৫-৪-১। অর্থাৎ বেশির ভাগ সময় বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সুযোগ মতো ৫/৬জন মিলে একসাথে আক্রমণ করা। ফুটবল বোদ্ধাদের অনেকেই এমন দুর্বল স্বাগতিককে নিয়ে এই আশঙ্কা করছে যে, আয়াজক দেশ হিসাবে না জানি প্রথম রাউ- থেকেই বিদায় হয়। কিন্তু আমি এটাতে দ্বিমত করি। দর্শকের সমর্থন ও ফিফার আশীর্বাদ দুটোই রাশিয়ার পক্ষে। ২০১৬ সালের ইউরোপ সেমিফাইনাল খেলার স্মৃতিও তরতাজা। সুতরাং রাশিয়া জ্বলে উঠে কাপটাই যে জিতবে না, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাছাড়া এমনিতেই রাশানদেরকে বিশ্বকাপ টানছে না। এর সাথে যদি নিজ দেশের তড়িঘড়ি বিদায় হয়, তবে বিশ্বকাপের স্থানীয় আমেজ শেষ। সুতরাং আয়োজক দেশ রাশিয়ার টার্গেট থাকবে প্রথম মাচেই সৌদির বিপক্ষে একটা বড় সড় জয় এনে দেশে হৈ চৈ ফেলে দেয়া। এজন্যই রাজহংস তুল্য সৌদি আরব ‘চিতা শাবক’ তুল্য রাশিয়াকে ভয় করবে ও রক্ষণাত্মক খেলবে।

বাংলাদেশে কোন দল বেশি সমর্থন পাবে?

রাসুলের (সাঃ) দেশ, মক্কা-মদীনার দেশ হিসেবে আজকের খেলায় বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমিদের সৌদিকেই ব্যাপক সমর্থন জানানোর কথা ছিলো। কিন্তু সৌদি ভূমি ও ভাইদের প্রতি এদেশের জনগণের প্রচ- আবেগ থাকলেও এর রাজতান্ত্রিক শাসন ও সেটার বাদশাহীকে বাংলাদেশীরা ঘৃণা করে। সেই রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার নতুন ফসল, সাম্প্রতিককালের রাজনৈতিক প্লেবয় প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সলিমান বা সংক্ষেপে ‘MBS’। কচিকাঁচারা গণিতের নামতা বার বার ভুল বলাতে  যেমনি করে বাবা-মায়ের হাসির খোরাক জোগায়, তেমনি এই নবীন প্রিন্সের রাজনৈতিক নামতা পাঠ বিশ্বের মুসলমানদেরকে হাসায়। তিনি আজকের খেলায় গ্যালারিতে হাজির থাকতে চেয়েছেন। জানিনা তিনি এই ম্যাচ কতটুকু উপভোগ করবেন, তবে বোধকরি ইসরাইল-সৌদি প্রীতি ম্যাচ হলে তিনি বেশ পুলকিত হতেন। সৌদির বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য নীতির জন্য এদেশের ফুটবল প্রেমীদের খুব নগন্য সংখ্যকই দলটিকে সমর্থন করবে। যদিও হযরত বেলাল (রাঃ)-এর বর্ণ সদৃশ্য অনেক বেদুঈন নিগ্রোকে বল নিয়ে ছুটোছুটি করতে দেখা যাবে, তবুও আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের। 

অপরদিকে, দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে (১৯১৭-১৯৯২) এ দেশের তরুণদের মাথা খাওয়া মার্কসবাদপন্থীরা লেলিনের দেশ রাশিয়াকে সমর্থন করবে কি’না তা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ এরা সবাই এখন ধনতান্ত্রিকUSA, UK এবং FRANCE-এর কোলে বসেছে। এদের নতুন কোনো সমর্থক গোষ্ঠীও বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। তাই শুরুতে যেটা বলেছিলাম-নিয়ম রক্ষার এক আকর্ষণহীন ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এই বিশ্বকাপ। তবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ হওয়ায় ‘খেলা দেখার জন্যই শুধু দেখা হবে!’ যেখানে সৌদির নিবেদন  ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি!’ আর রাশিয়ার হুংকার ‘গিলে ফেলার’! [email protected]