ভালোই 'অস্বস্তিতে' পড়েছেন মোদি

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারী ২০১৯ ১১:৩৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪১ বার।

ভারতের শীর্ষ তদন্ত সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) প্রধান অলোক ভার্মাকে সরানোর সরকারি আদেশ বাতিল করে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া আদশে অস্বস্তিতে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সর্বোচ্চ আদালত ওই মামলার রায় দিতে গিয়ে মঙ্গলবার বলেন, ওই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট, মহাপরিচালককে অপদস্থ করার চেষ্টা হয়েছিল।

২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে মোদি সরকার সিবিআই প্রধান অলোক বর্মা ও আরেক কর্মকর্তা রাকেশ আস্থানাকে ছুটিতে পাঠায়। সরকারের যুক্তি ছিল, দুই শীর্ষ কর্তার কলহ প্রকাশ্যে আসার ফলেই এই সিদ্ধান্ত।

কিন্তু কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, বর্মা রাফাল-চুক্তি নিয়ে তদন্ত শুরু করতে পারেন ভেবেই তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়। কেড়ে নেওয়া হয় যাবতীয় ক্ষমতা। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। বর্মা নিজে তাকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন।

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছেন। খারিজ হয়েছে যুগ্ম-অধিকর্তা নাগেশ্বর রাওকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্তও।

সিবিআইয়ের উপরে হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে রায়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের মন্তব্য, ‘সিবিআইয়ের অধিকর্তাকে  স্বাধীনতা ও  সততার প্রতীক হয়ে উঠতে হবে। সেজন্য তাকে সব ধরনের হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন।’

আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ লোকসভা ভোটের আগে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তুলল বলে বিরোধীদের দাবি। কারণ, সিবিআই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনেই কাজ করে। বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনস্থ কর্মীবর্গ দফতর দিয়েছিল।

কংগ্রেসের যুক্তি, নরেন্দ্র মোদিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যার বেআইনি সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হল। মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও মানছেন, ‘আদালত আপাতভাবে সিবিআই অধিকর্তার রক্ষাকবচকেই আরও মজবুত করেছে। আদালতের নির্দেশ পালন করা হবে।’ 

প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি এস কে কল ও বিচারপতি কে এম জোসেফের বেঞ্চের যুক্তি, দিল্লি স্পেশ্যাল পুলিশ এস্টাব্লিশমেন্ট আইন অনুযায়ী সরকার সিবিআই অধিকর্তাকে এ ভাবে ছুটিতে পাঠাতে বা পদ থেকে সরাতে পারে না। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে গঠিত বাছাই কমিটির অনুমতি নিতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে ওই কমিটির বৈঠক ডেকে বর্মাকে নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

আদালতের রায় অনুযায়ী, বর্মা পদে ফিরলেও তিনি আপাতত ‘বড় নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিতে পারবেন না। নতুন কোনও বিষয়ে উদ্যোগীও হতে পারবেন না। তবে রুটিন কাজ করতে কোনও বাধা নেই। বর্মাকে প্রয়োজনে সরানো বা তার ক্ষমতা ফেরানোর সিদ্ধান্ত কমিটিই নেবে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী ও লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের অবস্থান কী হবে, তা আঁচ করা যায়। ফলে সবটাই নির্ভর করছে প্রধান বিচারপতির উপরে।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান এন নাগেশ্বর রাও দায়িত্ব নিয়েই বর্মার আস্থাভাজন অফিসারদের বদলি করেছিলেন। বিশেষত যে সব অফিসারেরা রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছিলেন তাদের বদলি করা হয়েছিল। বর্মা তার আস্থাভাজন অফিসারদের ফিরিয়ে এনে আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্ত জোরদার করতে পারেন। ৩১ জানুয়ারি বর্মার অবসরের দিন। সিবিআই অফিসারদের মতে, পরিচালক চাইলে ২২ দিনেই সব ওলটপালট করে দিতে পারেন। বর্মা অবশ্য সাবধানে পা ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছেন।