আরও কিছুদিন স্বীয় পদে বহাল থকতে চেয়েছিলেন

দুদকের তদন্ত চলাকালেই অবসরে গেলেন আরডিএ’র ভারপ্রাপ্ত ডিজি মতিন

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯ ১৩:২১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫৬৬ বার।

অর্থ আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত চলাকালেই অবসরে গেলেন বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি’র (আরডিএ) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক (ডিজি) এম এ মতিন। বয়স ৫৯ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় গত ১৬ জানুয়ারি থেকে তার অবসরত্তোর ছুটি (পিআরএল) কার্যকর হয়েছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় সাড়ে ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত ডিজির দায়িত্ব পালন করে আসা এম এ মতিন চাকরির বয়স শেষ হলেও আরও কিছুদিন স্বীয় পদে বহাল থাকার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর তা কার্যকর করেনি। ফলে এখন তাকে অবসরেই যেতে হলো।


পুণ্ড্রকথা’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে এম এ মতিন পিআরএল-এ যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। স্বীয় পদে বহাল থাকার (এক্সটেনশন) জন্য আবেদন করেছিলেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আবেদন করেছিলাম কিন্তু তা কার্যকর হয়নি।’


আরডিএ’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এম এ মতিন ওই প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক। ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল তৎকালীন মহাপরিচালক নজরুল ইসলাম বদলী হয়ে গেলে পরিচালক এম এ মতিন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা সম্পন্ন আরডিএর মহাপরিচালকের পদটি বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু এম এ মতিন নন ক্যাডার কর্মকর্তা হয়েও নানা কৌশলে সাড়ে ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে মহাপরিচালকের পদ আঁকড়ে ছিলেন। 


আরডিএ’র ভারপ্রাপ্ত ডিজি এম এ মতিনসহ সরকারি গবেষণা ওই প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। তদন্তের প্রয়োজনে দুদকের পক্ষ থেকে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর এম এ মতিনকে চিঠি দিয়ে গ্রাম পর্যায়ে স্বল্প খরচে ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য নেওয়া ‘পল্লী জনপদ’ নামে বড় একটি প্রকল্পসহ ২০১২ সাল থেকে নেওয়া বেশ কয়েকটি প্রকল্পের নথি, ব্যাংক হিসাব, নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র তলব করা হয়।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানে প্রায় ৪২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ‘পল্লী জনপদ’ প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইতিপূর্বে বাস্তবায়ন করা চরজীবিকায়ন প্রকল্পসহ পানি সরবরাহ এবং খামার এবং স্কুল প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চিঠিতে আরডিএ’র গঠনতন্ত্র, বিভিন্ন প্রকল্পের নীতিমালা ও খরচের বিলভাউচারসহ মোট ১১ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়। দুদক তদন্ত শুরু করার পর পরই আরডিএ’র ভারপ্রাপ্ত ডিজি এম এ মতিনের অপসারণ এবং বিচার দাবিতে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে।

 

দুদক কর্মকর্তারা জানান, চাহিদা অনুযায়ী আরডিএ’র ভারপ্রাপ্ত ডিজি যেসব নথি জমা দিয়েছেন সেগুলোর তদন্ত চলছে। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, তদন্তের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগিরই রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। অবসরে যাওয়ার কারণে তদন্তে বিঘ্নিত হবে কি’না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের সঙ্গে তদন্তের কোন সম্পর্ক নেই।’