নির্বাচন পরবর্তী মতবিনিময় সভা

বগুড়ায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে জেলার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নালিশ জানালেন তৃণমুলের নেতারা

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:১৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২২৯ বার।

বগুড়ায় বিএনপির তৃণমুলের নেতা-কর্মীরা দলের চেয়ারপার্সনের স্থানীয় একজন উপদেষ্টা এবং জেলা কমিটির সহ-সভাপতিসহ শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে নালিশ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন পরবর্তী মতবিনিময় সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তারা মাঠের নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, মামলা পরিচালনায় সহযোগিতা না করা এবং কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে সরকারি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আঁতাতেরও অভিযোগ উত্থাপন করেন।
ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ্ বুলু। বিশেষ অতিথি ছিলেন যথাক্রমে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।  শহরের নওয়াব বাড়ি সড়কে দলের জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তৃণমুলের নেতা-কর্মীদের বক্তব্যের শুরুতে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে সাংবাদিকদের অবস্থান করতে দেওয়া হলেও পরে তাদের বেড়িয়ে যেতে বলা হয়।
তৃণমুলের নেতারা বগুড়াকে দলের ঘাটি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ জেলায়  সরকার বিরোধী আন্দোলনের তীব্রতা যতটা হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। কারণ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। কোন কোন সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে আঁততের মাধ্যমে গা বাঁচিয়ে চলার প্রবণতার কথাও তুলে ধরা হয়।
সভায় তৃণমুলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, বগুড়ায় গেল ১২ বছরে প্রায় ৪০০ মামলায় অন্তত ১৬ হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে যেতে হয়েছে। কিন্তু জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য কোন নেতাই তাদের মামলা পরিচালনায় কোন খোঁজ খবর নেননি। এমনকি তাদের পরিবারেরও খবর রাখেন নি। যে কারণে নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া সদর আসনে  বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারের জন্য নেতা-কর্মীদের কোন টাকা-পয়সা না দেওয়ার  অভিযোগ তুলে বলা হয়েছে, মামলা-মোকর্দমায় জর্জরিত নেতা-কর্মীরা যখন চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তখন তাদেরকে নির্বাচনী প্রচারে নামতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এজন্য তাদের কোন টাকা-পয়সা দেওয়া হয়নি। ফলে নেতা-কর্মীরা বাধ্য হয়ে ধার-কর্য করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন।
সভায় তৃণমুলের নেতা হিসেবে যারা বক্তৃতা করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, বগুড়া জেলা যুবদল সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু, যুবদল বগুড়া শহর কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা ও শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম।
সভায় উপস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আগামী দিনে বিএনপিসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে সব কমিটি পুনর্গঠনের পরিকল্পনার কথা জানান। পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, আসামী এবং কারাগারে অন্তরীণ নেতা-কর্মীদের সহায়তার জন্য তাদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সভা শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি তৃণমুলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রকাশের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘দলের অনেক নেতা নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। হাজার হাজার নেতা-কর্মী এখনও কারাগারে। এসব কারণে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কিছুটা ইমোশনালি কথা বলেছেন। এটা খারাপ কিছু নয়। বরং আমরা খুশি। আমরা তাদের বক্তব্যগুলো শুনেছি। তাদের বক্তব্যের সূত্র ধরে আগামীতে তৃণমুল থেকে দলকে পুনর্গঠন করা হবে।’ 
বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ্্ বুলু বলেন, ‘আমরা তৃণমুল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের সবাই একমত যে আমাদের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাকে মুক্ত করতে হলে আনেদালন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। এজন্য আমরা সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলেছি।’  এ সময় বিএনপি চেয়ারপার্সনের স্থানীয় দুই উপদেষ্টা সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান, বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন এবং সহ-সভাপতি আলী আজগর হেনা উপস্থিত ছিলেন।