জেলা কমিটির জরুরী সভায় সিদ্ধান্ত

বগুড়ায় উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৫:২২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩২০ বার।

বগুড়ায় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতাদের নির্বাচন থেকে সরে আসার আহবান জানানো হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার সকালে বগুড়া জেলা বিএনপির এক জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদেরকে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহবান জানিয়ে বলা হয়, যেসব নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হবে তাদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। 
দলীয় সূত্র জানায়, শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ওই সভায় নির্বাচনে প্রার্থীতা দাখিলকারী দলীয় নেতাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে নির্ধারিত দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরেও দলীয় পদবীধারীরা যদি প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করেন তাহলে তাদেরকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে। এছাড়া সভায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সহযোগিতা করায় বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি মাহবুবার রহমান বকুল ও সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক চৌধুরী হিরুর নামে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করার  সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ১০টি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করা নেতার মধ্যে জনের মধ্যে মাত্র দু’জন উপস্থিত ছিলেন।
বগুড়ায় ১২টি উপজেলার মধ্যে ১০টিতে বর্তমান এক চেয়ারম্যানসহ বিএনপির সাবেক ও বর্তমান অন্তত ১৯জন নেতা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন: সারিয়াকান্দি উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান হিরু ম-ল, অ্যাডভোকেট নূরে আযম বাবু, সোনাতলায় উপজেলায় জিয়াউল হক লিপ্পন, শিবগঞ্জ উপজেলায় বিউটি বেগম, নন্দীগ্রামে অ্যাড. এ রাফি পান্না, আহসান বিপ্লব রহিম, আলেকজা-ার ও মাহফুজুর রহমান, কাহালুতে ফরিদুর রহমান ফরিদ ও হুমায়ুন কবির খোকা, শেরপুরে জানে আলম খোকা, ধুনটে আলিমুদ্দিন হারুন ও আকতার আলম সেলিম, বগুড়া সদরে মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, গাবতলীতে একিউএম ডিফেন্স সুমন, শফিকুল ইসলাম ভোদন ও এহসানুল বাশার এবং শাজাহানপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান আবুল বাশার ও এনামুল হক শাহীন।
ওই ১৯ প্রার্থীর মধ্যে জরুরী সভায় শেরপুর ও শাজাহানপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করা যথাক্রমে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা জানে আলম খোকা এবং শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন। তবে এদের মধ্যে শুধু জানে আলম খোকাই বক্তব্য রেখেছেন। সভায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি রাজনীতি ছাড়ারও ঘোষণা দেন। অন্যদিকে শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল বাশার সভায় চুপচাপ থাকলেও পরে তিনি বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের চাপ থাকায় আমাকে নির্বাচনে থাকতেই হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমি দল থেকে পদত্যাগ করবো।’
 মনোনয়নপত্র দাখিল করা বিএনপির অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কেউই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। প্রয়োজনে তারা দল ছাড়বেন কিন্তু প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবেন না। বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেল বলেন, ‘আমি নির্বাচন থেকে সরছি না। আর দলের বিষয়ে আমি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিব।’ শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম ইতিপূর্বে বলেছেন, দল যে সিদ্ধান্ত নিক কিন্তু তিনি নির্বাচন করবেন। কাহালু উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা বিএনপির সদস্য ফরিদুর রহমান ফরিদ বলেন, ‘আমি নির্বাচনে আছি। তবে আমাকে দলের কোন পদে রাখা হয়েছে কি’না সেটা জানি না।’
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলীয় নেতাদের সহযোগিতা প্রদানের অভিযোগে শোকজের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বগুড়া শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে দু’একজন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল। তখন আমরা তাদের বলেছিলাম কেবল দল চাইলেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব। অন্যথায় নয়। একথা বলার পরেও যদি আমাদের শোকজ করা হয় তাহলে সেটি হবে দুঃখজনক।’
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রের নির্দেশে তারা উপজেলা নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের কোন স্তরের কোন নেতা-কর্মী যাতে নির্বাচনে না নেয় সেজন্য প্রতিটি উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহবান জানাবেন। আর যারা এরই মধ্যে মনোনয়পত্র দাখিল করেছেন তাদেরকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। যদি তারা সরে না দাঁড়ায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা কোন অবস্থাতেই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের এতটুকু ছাড় দিব না’।