বগুড়ায় পরিচ্ছন্নতা অভিযানে বিডি ক্লিনের সঙ্গে জেলা প্রশাসন পৌরসভা ও চেম্বার কর্তৃপক্ষ যুক্ত হচ্ছে

অরূপ রতন শীলঃ
প্রকাশ: ০২ অগাস্ট ২০১৮ ১৪:৪২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭৪৫ বার।

বগুড়া শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ‘বিডি ক্লিন-বগুড়া’র সঙ্গে এবার জেলা প্রশাসনসহ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাও যুক্ত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে বিডি ক্লিন-বগুড়ার সদস্যদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়। বিডি ক্লিনের প্রবীণ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সরিফুল মাসুদ পুণ্ড্রকথাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

জেলা প্রশাসন ছাড়াও অপর যেসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে সহায়তা দেবে সেগুলো হলো: বগুড়া পৌরসভা ও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি। বিডি ক্লিন-বগুড়ার সদস্যরা ছাড়াও সভায় ওইসব প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। 

সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বিডি ক্লিন-বগুড়ার কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং ৩ আগস্ট শুক্রবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশ নেওয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেন। সভায় বিডি ক্লিন-বগুড়ার সদস্যদের চাহিদার প্রেক্ষিতে বগুড়া চেম্বার কর্তৃপক্ষ আবর্জনা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ঝুড়ি (অস্থায়ী ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহৃত হবে) সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ প্রতি শুক্রবার সকালে বিডি ক্লিন-বগুড়ার সদস্যদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলাকালে আবর্জনাবাহী ট্রাক সরবরাহ করবে।

সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা এলাকা সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বিডি ক্লিন-বগুড়ার সদস্যদের কাছ থেকে সুপারিশ আহবান করেন। তখন সংগঠনের কয়েকজন সদস্য সাতমাথায় ফুচকা, পেয়াজু এবং ঝাল-মুড়ি বিক্রেতাদের সচেতন করার জন্য মাইকিংয়ের প্রস্তাব করেন। প্রতিটি দোকানের পাশে ঝুড়ি রাখা এবং দোকান বন্ধ করে ফিরে যাওয়ার সময় প্রত্যেকে সব আবর্জনা তুলে নিয়ে যাবে-এমন প্রস্তাবনাও তুলে ধরেন। 

বিডি ক্লিন-বগুড়ার সদস্য সরিফুল মাসুদ জানান সভার শুরুতেই জেলা প্রশাসক ‘বিডি ক্লিন বগুড়া’র ইতিহাস এবং এ ধরনের কার্যক্রম শুরুর প্রেক্ষাপট জানতে চান। তখন তিন সদস্য আকবার আহমেদ, সুমন এবং জিয়ন সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যগুলো তুলে ধরেন। তারা জানান, দু’ বছর আগে ঢাকায় একদল বিদেশি নাগরিককে নিজ হাতে রাজধানীর সড়ক পরিস্কার করতে দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র বেশ লজ্জা পান। পরে সেই শিক্ষার্থীরা ২০১৬ সালের ৩ জুন ‘বিডি ক্লিন’ নামে ঢাকায় একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং ১৪জন মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেন। তাদেরকে দেখে পরবর্তীতে ঢাকার অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ এই অভিযানে নেমে পড়েন। ধীরে ধীরে এ কার্যক্রম বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ৪৮টি জেলায় বিডি ক্লিনের ১৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে। ঢাকার সেই উদ্যোক্তাদের মধ্যে জিলহাজ নামে বগুড়ার এক শিক্ষার্থীও রয়েছেন। 

আকবর আহমেদ বলেন, ‘বগুড়ার ছেলে জিলহাজ, খুলনার আজহারুল এবং আমরা বগুড়ার স্থানীয় ফেরদৌস সুমন, শুভ ইসলামসহ আরও কয়েকজন মিলে এখানে এ ধরনের সংগঠন দাঁড় করানোর চেষ্টা করি। আমরা গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটা আর হয়ে উঠেনি। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা চলতি বছরের ২৯ জুন থেকে শুরু করতে পেরেছি। প্রতি শুক্রবার আমরা শহরের একেকটি সড়ক এবং ফুটপাত পরিষ্কার করছি। বর্তমানে আমাদের ৪০জন সদস্য রয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে আমরা পুরো বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্ন করতে চাই।’ 

সরিফুল মাসুদ জানান, শহরের সড়ক এবং ফুটপাতগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে উদ্যোগ গ্রহণ এবং ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাওয়ায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বিডি-ক্লিন বগুড়ার সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক বগুড়াকে পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে দেখতে চান। এজন্য তিনি বিডি ক্লিনি-বগুড়াকে সব ধরনের সহায়তা দিতে রাজি আছেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বগুড়া পৌরসভার মেয়রের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বগুড়া চেম্বারের পক্ষে সহ-সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ ও বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য সুলতান মাহমুদ খান রনি উপস্থিত ছিলেন।