পাকিস্তানের হামলা থেকে বাঁচতে বাংকার খুঁড়ছে ভারতীয় গ্রামবাসী

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:৩৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৪ বার।

ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া এলাকায় বালাকোটের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বোমা হামলার পর থেকে দুই দেশে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের গ্রামবাসীরা। পাকিস্তানের পাল্টা হামলার ভয়ে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকার ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর এলাকায় গ্রামবাসী মাটি খুঁড়ে বাংকার তৈরি করছে। খবর এএফপি

জম্মু-কাশ্মীর এলাকার একটি ছবিতে দেখা যায় বাংকার তৈরির পর সেখান থেকে পানি নিষ্কাশন করছে গ্রামবাসীদের কয়েকজন। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়,এ শহরটিতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ায় ঘটনায় মঙ্গলবার ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানে হামলা করছে। এর পর থেকে সীমান্তবর্তী মানুষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

মঙ্গলবার মিরাজ-২০০০ জঙ্গিবিমান ব্যবহার করে লেজার গাইডেড এক হাজার পাউন্ডের বোমা ফেলা হয়েছে। ইসরাইলি প্রযুক্তি দিয়ে এই লেজার গাইডেড বোমা তৈরি করা হয়েছে। কারগিলে যার প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল।

এ হামলায় পাকিস্তানের ৩০০ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করছে। পাকিস্তানে হামলার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটিতে এক জরুরি বৈঠকে বসেছেন।

তবে এ হামলায় কোনো হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর।

এদিকে ইমরান খানের নেতৃত্বে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত যে স্থানে হামলা করার দাবি জানিয়েছে, সেখানে সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য বিশ্বের জন্য স্থানটি খোলা রাখা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় সরকার আরেকবার তাদের আত্মস্বার্থে বেপরোয়া কাল্পনিক দাবির আশ্রয় নিয়েছে।

‘ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভারত অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে যে আগ্রাসন চালিয়েছে, সময় ও স্থান অনুসারে পাকিস্তান তার জবাব দেবে।’

বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান উপস্থিত ছিলেন।

কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মুজাফফরাবাদ সেক্টরে ভারতীয় বিমান অনুপ্রবেশ করেছিল বলে স্বীকার করেছেন।

পাক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর মঙ্গলবার টুইটারে তিনি লিখেছেন- ভারতীয় বিমান নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সীমান্ত লঙ্ঘন করলেও পাকিস্তানি বিমানের তাড়া খেয়ে পালিয়ে গেছে।

পরবর্তী সময় তিনি বলেন, পাক বিমানবাহিনী যথাসময়ে ও কার্যকরভাবে সাড়া দিয়েছে। তাড়া খেয়ে পালানোর আগে বালাকোটের কাছে বোমা ফেলে গেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

পরবর্তী সময় আসিফ গফুর বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ সেক্টরের ভেতর তিন থেকে চার মাইলের ভেতর ভারতীয় বিমান ঢুকে পড়েছিল।

তবে টুইটারে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল পিটিআই বলেছে, আমরা বুঝতে পারছি- এটি ভারতীয় নির্বাচনের বছর। কাজেই সীমান্তে তারা বেশ বেপরোয়াই থাকবে। তবে ঘটনা হচ্ছে, পাকিস্তানি টহল বিমান তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে।

এর আগে ভারতীয় কৃষিমন্ত্রী গাজেন্দ্র সিং শেখওয়াত বলেন, নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পে মঙ্গলবার সকালে বিমান হামলা চালিয়েছে ভারতের বিমানবাহিনী। হামলায় সন্ত্রাসীদের ওই ক্যাম্প পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

মুজাফফরাবাদ এলাকাটি পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অংশ ও বালাকোট শহরটি কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে।

এর আগে ২০১৬ সালে নিয়ন্ত্রণরেখার অপর পাশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাতটি শিবিরে সার্জিক্যাল হামলা চালানোর দাবি করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী।

ওই বছরের প্রথম দিকে জম্মু ও কাশ্মীরের উরি সেনাঘাঁটিতে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ওই অভিযান চালানো হয় বলে দাবি করেছিল ভারত।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্ম-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় দেশটির আধাসামরিক বাহিনীর ৪৯ জন সদস্য নিহত হয়েছে। এ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ হামলার ঘটনায় মোদি সরকার ভারত সেনাবাহিনীকে সব ধরনের ক্ষমতা প্রদান করে। এর পরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাক সেনাদের হামলার প্রতিরোধ করতে যে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে একটি বিল পাস করেন।