ছয় উপজেলার কয়েক  লাখ মানুষের ভোগান্তি চরমে 

বগুড়ায় ১০৬ কি.মি. সড়কের খানাখন্দগুলো এখন ডোবায় পরিণত

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০১৯ ১৩:২৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩১৭ বার।

বগুড়ায় খানাখন্দে ভরা ছয় উপজেলার ১০৬ কিলোমিটার সড়ক এখন কয়েক লাখ মানুষের নিত্যদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে নন্দীগ্রাম ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার ৬৪ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণে নেওয়া একটি প্রকল্প অনুমোদন পেলেও টেন্ডার হয়নি। ফলে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। 
তবে টেন্ডার সম্পন্ন এবং ঠিকাদার নিয়োগ হলেও শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে সোনাতলা এবং সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১৮ কিলোমিটার সড়ক মেরামত শুরু হয়নি এখনও। আর শিবগঞ্জের একটি সড়কের ৬ কিলোমিটার অংশ এবং গাবতলী উপজেলার মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া সড়কের ১৮কিলোমিটার অংশ মেরামতের জন্য আজ পর্যন্ত কোন বরাদ্দই মেলেনি।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, প্রায় ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে মেরামতের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় জেলার দক্ষিণে নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর থেকে উত্তরে দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া হয়ে জিয়ানগর এবং নন্দীগ্রামের কাথম থেকে নওগাঁর কালিগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এর মধ্যে তালোড়া থেকে দুপচাঁচিয়া এবং দুপচাঁচিয়া থেকে জিয়ানগর অংশের গর্তগুলো যেন রীতিমত ডোবায় পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সেগুলো যেন পুকুরে পরিণত হয়। তখন দুপচাঁচিয়া-জিয়ানগর সড়কে যানবাহনগুলোকে বিকল্প ঘুর পথে চলাচল করতে হয়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামের ওমরপুর থেকে দুপচাঁচিয়ার তালোড়া হয়ে জিয়ানগর পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার এবং নন্দীগ্রামের কাথম থেকে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কালিগঞ্জ পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়ক দু’টি ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুট সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ‘ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য রাস্তাঘাট উন্নয়নে সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ’ নামে একটি প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর অপেক্ষার পর ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর ১৭৯ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ওই প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। তবে এখন পর্যন্ত টেন্ডার আহবান করা যায়নি। ফলে কাজও শুরু হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে ওই দু’টি সড়কে বছরে অন্তত একবার হলেও সওজের পক্ষ থেকে মেরামত কাজ করা হতো। কিন্তু নতুন প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর গেল সাড়ে ৩ বছরে একটি ইটও আর ফেলা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে উন্নয়নের জন্য একটি সড়ককে যদি কোন প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত করা হয় তাহলে সওজের নীতিমালা অনুযায়ী সেই সড়কে মেরামতের জন্য কোন আর কোন প্রকল্প থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে সড়ক দু’টিতে জুড়ে সৃষ্ট পুরানো খানাখন্দগুলো এখন যেন একেকটি  ডোবায় পরিণত হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে ওই সড়কের বেহাল অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জিয়ানগরের বাসিন্দা আবু সাঈদ সুজা। সমকালের কাছে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আজ কয়েক বছর ধরে শুনিচ্চি (শুনছি) যে আস্তা বড় করার পোজেক্ট (প্রজেক্ট) লিছে (নিয়েছে)। কিন্তু কুনটি (কোথায়) কিছুই তো হওছে না (হচ্ছে না).. বরং আস্তার অবস্থা দিন আরও খারাপ হওছে (হচ্ছে)..আর হামাকেরে (আমাদের) কোমরও ভাঙ্গোছে (ভাঙছে)’।
বাকি সড়কগুলোর মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা থেকে সোনাতলা উপজেলা এবং সোনাতলা উপজেলা থেকে যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা অংশে ১৮ কিলোমিটার অংশের মেরামতের জন্য ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ হলেও কাজ শুরু করা যায়নি। সোনাতলার বাসিন্দা নাট্যকর্মী সিজুল ইসলাম জানান, মোকামতলা তলা থেকে সোনাতলা সড়কের কয়েকটি স্থানে রীতিমত খাদে পরিণত হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই সেগুলো ডোবায় পরিণত হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চলাচল করি। শুকনো মৌসুমে অনেক কষ্ট হলেও যাওয়া যায় কিন্তু বর্ষা হলে তো বিকল্প সড়ক ছাড়া চলাচলের কোন উপায় থাকে না।’
প্রায় একই অবস্থা শিবগঞ্জের খয়েরাপুকুর-পীরব বাজার সড়কের ৬ কিলোমিটার এবং গাবতলীর গোলাবাড়ি-পোড়াদহ সড়কের ১৮ কিলোমিটার অংশ। সওজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই দু’টি সড়কের ২৪ কিলোমিটার অংশ মেরামতের জন্য ৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফলে টে-ারও করা যাচ্ছে না।
বগুড়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘নন্দীগ্রাম ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি সড়ক পুনর্নির্মাণের জন্য পনের দিনের মধ্যে টেন্ডার আহবান করা হবে। তবে কাজ শুরু হবে বর্ষার পরে।’ শিবগঞ্জের মোকামতলা থেকে সোনাতলা এবং সারিয়াকান্দি উপজেলার ১৮ কিলোমিটার সড়ক মেরামত কবে শুরু হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে ঠিকাদাররা মালামাল আনতে শুরু করেছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।’ শিবগঞ্জের খয়রাপুকুর ও গাবতলীর গোলাবাড়ি সড়ক মেরামত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ খাতে এখনও পর্যন্ত কোন অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই গুরুত্বপূর্ণ ওই দু’টি সড়ক মেরামতের ব্যাপারে এই মুহুর্তে কোন কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।’