ডাকসুর পুনঃনির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা

দায়িত্ব নেব কি না আলোচনার পর সিদ্ধান্ত: নুর

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০১৯ ১৪:৪১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬৬ বার।

পুনরায় ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলন চলমান রাখার কথা জানিয়েছে নির্বাচন বর্জনকারী চার প্যানেল। রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী প্যানেল, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশন একথা জানায়।

১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ওইদিনই ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যান্য সংগঠনগুলো নির্বাচন বর্জন করেছিল। এর মধ্যে প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী প্যানেল, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশন- নির্বাচন বর্জন করে একসঙ্গে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করে। তবে রোববার দুপুরে প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য আলাদা সংবাদ সম্মেলন করলে তাদের বিভাজনের প্রশ্ন চলে আসে। তবে সন্ধ্যার সংবাদ সম্মেলনে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে পাঁচ প্যানেল একসঙ্গেই আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে চার প্যানেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।খবর সমকাল অনলাইন

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী রাশেদ খান, এজিএস প্রার্থী ফারুক হাসান, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান, স্বতন্ত্র স্বাধিকার পরিষদ সমর্থিত জিএস প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান, ছাত্র ফেডারেশেনর জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজির প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ, মর্যাদা ও সম্মানকে অক্ষুন্ন রাখতে এবং এ নির্বাচনকে প্রশ্নের উর্ধ্বে রাখতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির আলোকে ১১ মার্চের নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল ঘোষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, পাঁচ দফা দাবিতে সোমবার ক্লাস বর্জন ও উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে নির্বাচন বর্জনকারী প্যানেলগুলো। পৃথক আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা। দাবিগুলো হলো- ডাকসু নির্বাচন বাতিল, পুনঃতফসিল দেয়া, উপাচার্যের পদত্যাগ, মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের বিচার। নির্বাচন বর্জনকারী চার প্যানেলের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন স্বতন্ত্র জোট থেকে ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান।

সাংবাদিকরা ভিপি হিসেবে বক্তব্য জানতে চাইলে নুরুল হক নুর বলেন, শুরু থেকেই আমার বক্তব্য স্পষ্ট করে আসছিলাম। জাতির জনকের একটি কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলি, ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে এবং সে যদি সংখ্যায় একজনও হয়, তাহলে তার কথা আমরা মেনে নেব।’ এই ধারণা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে দাবি তুলেছেন এবং আমরাও দেখেছি, এই নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে। এ থেকেই বিভিন্ন প্যানেলের সঙ্গে আমরা একাত্মতা পোষণ করেছিলাম যে, ২৮ বছর পর যে নির্বাচন হয়েছে তা সুষ্ঠু হয়নি। বরং এ নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর একটি কালিমা লেপে দেওয়া হয়েছে। আমরা সেজন্য এ নির্বাচন পুনরায় দেওয়ার কথা বলেছি। যেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবং এ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তারা বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছে তাদের পদত্যাগ করতে হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর মানুষের যে অনাস্থা জন্মেছিল, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সেটা ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে পর্যক্ষেণ করলাম যে, সে ধরণের কোনো পরিকল্পনা এ নির্বাচনে দেখা যায়নি। এ নির্বাচনে শিক্ষকরাই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর প্রমাণ আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পেয়েছি। সেই জায়গা থেকে আবারো সবার দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।

ভিপির কার্যক্রম চালানো অবস্থায় নির্বাচন চান কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, আমি এখনও কার্যক্রম শুরু করিনি। সেটা পরিবেশ পরিস্থিতি এবং আমরা যারা একসঙ্গে আন্দোলন করছি তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব যে, আমি দায়িত্ব গ্রহণ করবো কি না।

অভিষেক অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন কি না- এর উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি ভাসা ভাসা তথ্য শুনেছি। আমার আন্দোলনকারী ভাইবোনেরা যদি বলেন তাহলে দায়িত্ব নেব, তা না হলে নেব না।

পাঁচ প্যানেল একসঙ্গে আন্দোলন করার পর কেন আলাদাভাবে সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে- এই পশ্নের জবাবে নুর বলেন, গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। সেখানে তার কাছে আমাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছি। তার সঙ্গে কী কথা হয়েছে- তা আমার সংগঠনের সবার সঙ্গে শেয়ার করেছি। কথা শেয়ার করার কারণে ওইসময় (বামজোটের সংবাদ সম্মেলনের সময়) থাকতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমস্যা তুলে ধরাসহ নির্বাচনের অনিয়মের কথাও তুলে ধরেছি।

পাঁচ প্যানেল একসঙ্গে আন্দোলন করছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, ১১ মার্চ নির্বাচনে যে অনিয়ম হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমরা পাঁচ প্যানেল অদ্যাবধি আন্দোলন করেছি এবং একসঙ্গেই আন্দোলন চলমান রাখবো।

গণভবনে ডাকসু পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন, অথচ সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর পুনঃনির্বাচন চাচ্ছেন- আসলে আপনি কোন দিকে আছেন এবং গণভবনে গিয়ে পুনঃনির্বাচনের দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও জানিয়েছিলেন কি না, জানালে তিনি কী বলেছেন- এর জবাবে নুরুল হক নুর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে আমরা গণভবনে গিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ডাকসুর বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে এবং ছাত্ররা পুনঃনির্বাচন চাচ্ছে। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন- সেকথা বলেছি।

তিনি বলেন, কারচুপি ও অনিয়মের পরও আমরা ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছিলাম। এই দুটি পদে এতো ভোট পড়েছিলো যে প্রশাসন অন্যান্য প্রার্থীদের ভোটের সঙ্গে ব্যালেন্স রাখতে পারেনি। এ কারণে এ দুটি পদ ছাড়া বাকি পদে নির্বাচন চেয়েছিলাম। তবে দেখা গেছে- শিক্ষার্থীরা সকল পদে পুনঃনির্বাচন চাচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আমরা বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থীও যদি যৌক্তিক ও ন্যায্য বিষয়ে কথা বলেন- তবে আমি সেই দাবির সঙ্গে রয়েছি। তখন আমিও তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। প্রথম দাবিটা ছিলো আমার ব্যক্তিগত। পরের বক্তব্যটি ছিল শিক্ষার্থীদের চাহিদার আলোকে উৎসারিত।

ফারুক হাসান বলেন, গত ১১ মার্চ দীর্ঘ ২৮ বছর পর প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। নির্বাচন ব্যবস্থায় মানুষের যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল, সেই সংকট থেকে উত্তরণের মাধ্যম হিসেবে ডাকসু নির্বাচনকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা যেত। কিন্তু অনুষ্ঠিত হওয়া ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপিসহ সকল কার্যক্রমে অস্পষ্টতা রয়েছে। কুয়েত মৈত্রী হল রোকেয়া হলসহ বিভিন্ন হলে অনিয়মের অভিযোগের চিত্র তুলে ধরেন।