শুধু নুসরাতের আসনটি ফাঁকা...

পুন্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:৩৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭৩ বার।

কেন্দ্রে পরীক্ষা চলছে। যথারীতি এতে অংশগ্রহণ করছেন পরীক্ষার্থীরা। সব আসনে শিক্ষার্থী বসলেও একটি আসন পড়ে আছে ফাঁকা। এই ফাঁকা আসনটি আর পূরণ হবে না। হবেই বা কী করে; আসনটি যে আগুনের পুড়ে মারা যাওয়া নুসরাত জাহান রাফির।

আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গিয়ে গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ঝলসে যায় রাফির শরীর। বুধবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থার তার মৃত্যু হয়।

বৃহস্পতিবার ছিল নুসরাতের ফিকহ দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্রে নিজের আসনে বসা হয়নি তার। সবাই যখন পরীক্ষার খাতায় লেখা নিয়ে ব্যস্ত নুসরাত তখন হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রওনা হয়েছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। শেষ বারের মতো বাড়ি যাচ্ছেন তিনি। বাড়ি পৌঁছেই চিরঘুমে ঘুমিয়ে পড়তে হবে তাকে।

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ময়নাতদন্তের পর নুসরাতের নিথর দেহ বহন করা অ্যাম্বুলেন্সটি বাড়ি পৌঁছানোর কথা রয়েছে দুপুরে। বাদ আসর সোনাগাজী পাইলট হাই স্কুল মাঠে তার জানাজা হবে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাদির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে। তার মৃতদেহ ফেরার খবরে আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার শতশত মানুষ সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মৌলভী বাড়িতে ভিড় করেছেন।

নুসরাতের সহপাঠিরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের ৮ নম্বর কক্ষে ফিকহ ২য় পত্রের পরীক্ষা হয়। এখানেই পরীক্ষায় বসার কথা ছিল তার। খালি পড়ে রয়েছে তার আসনটি। নুসরাতের পরীক্ষার রোল নম্বর ছিল ১৪৯৬১৪।

নুসরাতের সহপাঠীরা বলেন, সবাই আছে শুধু নুসরাত নেই। পরীক্ষার হলে তার আসনটি ফাঁকা পড়ে থাকে। হঠাৎ কোথা থেকে কি হয়ে গেল। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।

আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গিয়ে গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে নুসরাতকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরা ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন নুসরাতকে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

সোমবার নুসরাত জাহান রাফি ‘ডাইং ডিক্লারেশন’ (মৃত্যুশয্যায় দেওয়া বক্তব্য) দেন। নুসরাত তার বক্তব্যে বলেছেন, ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে তার শরীরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে ওড়না পুড়ে গেলে তার হাত মুক্ত হয়। বোরকা, নেকাব ও হাতমোজা পরা যে চার নারী তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন, তাদের একজনের নাম সম্পা বলে জানান নুসরাত।

ওই ছাত্রীর স্বজনরা বলেন, ‌২৭ মার্চ তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা নুসরাতকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় থানায় মামলা করেন তার মা। ওই মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে রয়েছেন। মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের লোকজন হুমকি দিয়ে আসছিল বারবার।

তারা জানান, আলিম পরীক্ষা চললেও আতঙ্কে স্বজনরা পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। মামলা তুলে না নেওয়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় নুসরাতকে। খবর সমকাল অনলাইন