জন্মদিনের কথা মনে না থাকায় অভিমানে শিক্ষিকার আত্মহত্যা!

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:১২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫৭ বার।

সিরাজগঞ্জে জন্মদিনের কথা মনে না থাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করলেন প্রিয়াঙ্কা সাহা (২৫) নামে এক শিক্ষিকা।

প্রিয়াঙ্কা সাহা সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার গোশলা রোডের বলরাম সাহার মেয়ে। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পিপুলবাড়িয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা ছিলেন।

মঙ্গলবার সকালে নিজ বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। ওই দিন রাতেই ঘুরকা মহাশ্মশান ঘাটে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

এ ব্যাপারে নিহত প্রিয়াঙ্কা সাহার বাবা বলরাম সাহা ও মা বন্দনা সাহা জানান, ২২ এপ্রিল ছিল প্রিয়াঙ্কার জন্মদিন। ওইদিন বিকালে সে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে তার বান্ধবীদের সঙ্গে মোবাইলে জন্মদিন নিয়ে কথা বলছিল। এ সময় তারা মেয়ের কাছে নিশ্চিত হন ওইদিন প্রিয়াঙ্কার জন্মদিন।

তারা বলেন, এ সময় প্রিয়াঙ্কা আমাদের উদ্দেশ করে বলে, তোমরা আমার বাবা-মা, আর তোমরাই আমার জন্মদিনের কথা ভুলে গেলে! তবে এ মন্তব্য করার পরও সে সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলছিল।

প্রিয়াঙ্কার বাবা-মা আরও বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রিয়াঙ্কা নিজের শোবার ঘরের পাশে অন্য একটি ঘরে শুতে যায়। এর কিছুক্ষণ পর মা বন্দনা সাহা প্রিয়াঙ্কাকে রাতের খাবার খেতে ডাকাডাকি করেন। এ সময় প্রিয়াঙ্কার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি ছোট মেয়ে ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ছাত্রী অন্তরা সাহাকে বিষয়টি জানান। পরে অন্তরা তার বোন প্রিয়াঙ্কাকে মোবাইল করলেও তা রিসিভ করেনি।

সকাল সোয়া ৮টার দিকে নাশতা করার জন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে ডাকাডাকি করে। কিন্তু প্রিয়াঙ্কার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয় এবং প্রতিবেশীদের ডেকে এনে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। এ সময় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো প্রিয়াঙ্কার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তারা।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় নিহতের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলে রাতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। প্রিয়াঙ্কার বোন বড় ও সিরাজগঞ্জ কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা বর্ণালী সাহা জানান, প্রিয়াঙ্কা লেখাপড়ায় ছিল বেশ ভালো। নাট্যজগৎসহ সাংস্কৃতিক জগতে ছিল তার বিচরণ। তবে কোথাও গেলে বাবা, মা অথবা বোনদের কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতো। একা কোথাও যেত না। তিন বোনের মধ্যে পিয়াঙ্কা ছিল মেঝো। এ বছরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলা বিষয়ে ফার্স্টক্লাস পেয়ে মাস্টার্স পাস করে।

পরীক্ষা শেষে গত বছরের ডিসেম্বরে সিরাজগঞ্জে চলে আসে। প্রায় আড়াই মাস আগে শিক্ষকা হিসেবে চাকরি হয় সদর উপজেলার পিপুলবাড়িয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে।

বর্ণালী সাহা বলেন, আমরা তিন বোন নিজেদের মধ্যে ছিলাম বেশ খোলামেলা। নিজেদের ভালোমন্দ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হতো। আমাদের বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ। প্রিয়াঙ্কার একটাই ভাবনা ছিল কি করে অসুস্থ বাবা-মাকে ভালো রাখা যায়।

তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রিয়াঙ্কার মতামত নিয়েই পরিবার থেকে ওর বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছিল। ও শুধু বলতো ভালো ঘরে বিয়ে দিও, অসুস্থ বাবা-মায়ের পাশে যেন দাঁড়াতে পারি।

এ সময় তিনি এ ঘটনার সঙ্গে প্রেমসংক্রান্ত কোন বিষয় জড়িত নয় বলে দাবি করেন। তবে স্বভাবগতভাবে প্রিয়াঙ্কা ছিল অভিমানী, জেদি ও রাগী। কী কারণে পরিবারের সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে এভাবে চলে গেলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার এসআই মেহেদী জানান, জন্মদিন পালনকে কেন্দ্র করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত শেষে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।