মহান মে দিবস আজ

পুন্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ মে ২০১৯ ০৮:২৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৯০ বার।

শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম আর সংহতির দিন মহান মে দিবস আজ।

১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। কারন নামমাত্র মজুরিতে তারা মালিকদের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে বাধ্য হতেন। এ নিয়ে আহূত আন্দোলনে শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। গুলিতে মারা গিয়েছিলেন ৬ শ্রমিক। এর প্রতিবাদে ৪ মে হাজার হাজার শ্রমিক ফেটে পড়েছিলেন বিক্ষোভে। সেদিনও পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

আন্দোলন গড়ে তোলার অপরাধে কয়েকজন শ্রমিককে মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়েছিল। এভাবে প্রাণের বিনিময়ে শ্রমিকশ্রেণী কায়েম করেছিল দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার।

শুধু তাই নয়, ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক ঐক্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য- 'শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, উন্নয়নের শপথ করি।' নির্দিষ্ট  শ্রমঘণ্টার সঙ্গে পরে বেতনবৈষম্য দূর করা, ন্যূনতম মজুরি, নিয়োগপত্র প্রদানের মতো বিষয়ও শ্রমিকদের জোরালো দাবিতে পরিণত হয়। বিশ্বব্যাপী ট্রেড ইউনিয়নগুলো শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।বস্তুত মে দিবসের পথ ধরেই শ্রমিকদের নানা অধিকার অর্জিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের নিজেদের এবং তাদের শ্রমের মর্যাদা পেয়েছে গুরুত্ব। উন্নত দেশে এখন শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি কাজের পরিবেশও হয়েছে উন্নত।

তবে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর শ্রমিকশ্রেণীর দুর্দশা ঘোচেনি। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। শ্রমিকশ্রেণীর অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হলেও তা মানা হচ্ছে না।

অনেক বেসরকারি শিল্পকারখানায় আইএলও নির্ধারিত শ্রমঘণ্টাও মানা হয় না। দেশে শ্রমিকশ্রেণী শুধু ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত নয়, অনেক ক্ষেত্রে তাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণও বটে। আগুনে পুড়ে ও ভবন ধসে প্রায়ই মরতে হয় তাদের। এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে তাদের জীবন ও শ্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মে দিবসে শ্রমিকশ্রেণীর মানবেতর জীবনের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার করতে হবে আমাদের সবাইকে।

সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে শিশু শ্রমিক নিয়োগ এখনও অব্যাহত আছে। নারী শ্রমিকরা শিকার হচ্ছেন মজুরি বৈষম্যের। বিশ্বায়নের যুগে উদারীকরণ নীতিও শ্রমিক স্বার্থে আঘাত হানছে বলে বিভিন্ন মহলের জোরালো মত রয়েছে। এবারের মে দিবসে এসব বিষয়কেই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের।

সবচেয়ে যা জরুরি তা হল, শ্রমের মর্যাদা নিশ্চিত করা। শ্রমিকশ্রেণী সামাজিকভাবে মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি এখনও। অথচ কাজ কাজই, তা যে প্রকৃতিরই হোক না কেন। মর্যাদা ও অধিকারের প্রশ্নে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ ও দৈহিক কাজের মধ্যে পার্থক্য করা সভ্যতাপরিপন্থী।

সমাজের অন্যান্য পেশার মানুষের মতো শ্রমিকদের একটি মর্যাদাসম্পন্ন শ্রেণী হিসেবেই দেখা উচিত আমাদের। মহান মে দিবসে দেশের সব শ্রমজীবী মানুষের প্রতি রইল আমাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। খবর যুগান্তর অনলাইন।