সন্তানের জন্য দুধ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লেন বেকার পিতা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ মে ২০১৯ ১৫:০৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৭৭ বার।

তিন মাস হলো চাকরি নেই। ঘরে দুধের শিশু। কিন্তু সামান্য দুধ কেনার টাকাও জোগাড় করতে পারছেন না বেকার পিতা। ওদিকে ক্ষুধার জ্বালায় অবুঝ সন্তানটি কেঁদেই চলেছে। জন্মদাতা হয়ে তা সহ্য করতে পারছিলেন না। সন্তানকে বাঁচাতে হলে যে করেই হোক দুধের ব্যবস্থা করতেই হবে। অনেক চেষ্টা করেও এক কৌটা দুধের ব্যবস্থা করতে না পেরে এক পর্যায়ে তিনি নিকটবর্তী ‘স্বপ্ন’ নামে একটি সুপার শপ থেকে তা চুরির সিদ্ধান্ত নেন। 


কিন্তু তিনি তো আর পেশাদার ‘চোর’ নন। তাই যা হবার তাই হলো। নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে দুধের কৌটাসহ হাতে-নাতে ধরেও ফেললো। ডাকা হলো পুলিশকে। সন্তানকে দুধ খাওয়াবেন কি- উল্টো তার জেলে যাওয়ার যোগাড়। তবে হঠাৎ করেই সেখানে হাজির এক সিনিয়র এক পুলিশ কর্মকর্তা। সবকিছু শুনে তিনি আর স্থির থাকতে পারেননি। কী ঘটেছিল তার পরের ঘটনা জানুন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারি কমিশনার জাহিদুল ইসলামের ফেসবুক টাইম লাইন থেকে।


‘গতকাল (শুক্রবার) রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট, বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম।


একজন বললো, "স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল"। পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বললো, "স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল"।


আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বললো, " স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল"। আমার খটকা লাগলো,আমি জিজ্ঞেস করলাম "দুধ"?তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, " স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট"।আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেলল।তারপর বললো, "স্যার, তিনমাস হল চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।"


সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল!! মনে হল কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে!!ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত একই কাজ করতাম। সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বললো, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।


আজ আমাদের দেশের এক অসহায় বাবা তার বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করে...কত মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোঁচাতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে..হয়ত আমি ভালো চাকুরী করে আজ ভাল আছি, কিন্তু সমাজের কত মানুষ আজ এই বাবার মত নিরূপায়!!! এর দায়ভার কার??!!’
বার্তা ২৪ নামে একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের ওই লেখাটি ভাইরাল হওয়ার পর ‘স্বপ্ন’ সুপার সপ কর্তৃপক্ষ সন্তানের জন্য দুধ চুরি করা সেই ব্যক্তিকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।