ফসলী জমি হারানোর আশঙ্কায় যমুনা নদী পাড়ের শতাধিক মানুষ

বগুড়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি খাস দেখিয়ে ‘গুচ্ছগ্রাম’ করার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১৩ মে ২০১৯ ১০:৪৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২১০ বার।

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০ একর জমি ‘খাস সম্পত্তি’ দেখিয়ে তাতে সরকারিভাবে দুটি গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠার অভিযোগ উঠেছে। জমিগুলোকে উর্বর ও আবাদী উল্লেখ করে মালিকরা গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। শতাধিক জমি মালিকের পক্ষে সোমবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের শাহানবান্দা গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম। 
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে অবৈধভাবে গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠার কাজ বন্ধ রাখার জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসক এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর ইতিপূর্বে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে। এমনকি আদালতে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। শুনানী শেষে আদালত কারণ দর্শানো নোটিশ দিলেও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট অব্যাহত রেখেছেন।
জমি মালিকদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়,  সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের সাহানবান্দা মৌজায়  যমুনা নদী তীরবর্তী ৯৫৫ দাগে সি.এস (ক্যাডাস্টাল সার্ভে) ও এম.আর.আর মূলে শতাধিক ব্যক্তির প্রায় ৫০ একর ফসলি জমি রয়েছে। তবে ১৯৮৪ সালে এবং ১৯৮৬ সালে দু’দফা বন্যায় যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে বাঁধ ভেঙ্গে নদীর তীব্র ¯্রােতে ওই জমিগুলোসহ আশ-পাশের জমিতে গভীর গর্ত এবং খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। 
এমন পরিস্থিতিতে ১৯৮৮ সালে ভূমি জরিপের সময় সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শতাধিক ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই জমিগুলোকে ‘খাস’ অর্থাৎ সরকারি দেখিয়ে তা এক নম্বর খতিয়ানভুক্ত করেন। যা জমি মালিকদের জানা ছিল না। তারও ৫/৬ বছর পর ওই জমিগুলোর পেছনে যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মিত হলে সেগুলো ভরাট হয়ে আগের অবস্থায় অর্থাৎ ফসলী জমি হিসেবে জেগে ওঠে। এরপর থেকে জমি মালিকরা সীমানা নির্ধারণ করে নিজ নিজ জমিতে ধান, মরিচ, গম ও পাটসহ নানা ফসল আবাদ করে আসছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, চলতি বছরের শুরুতে হাটশেরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি ওই জমিগুলো মাপতে যান। জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, জমিগুলো খাস হয়ে গেছে এবং সেখানে সরকারি অর্থে দু’টি গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিষয়টি জানার পর গত ২৩ জানুয়ারি সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করা হয়। এরপর কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও গত ২৪ এপ্রিল স্থানীয় চেয়ারম্যানের লোকজন ফসলি জমিতে ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলা শুরু করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আমিরুল ইসলাম বলেন, ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী নদী ভাঙ্গন কবলিত কোন জমি ৩০ বছর আবার জেগে উঠলে তার মালিকানা প্রকৃত মালিক বা তাদের ওয়ারিশরা ফিরে পাবেন। কিন্তু আমাদের ৫০ একর জমি সাবেক অবস্থায় জেগে ওঠার পরেও সেগুলোকে খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৩ একর জমিতে ‘সাহানবান্দা-১’ ও ‘সাহানবান্দা-২’ নামে দু’টি গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার জন্য সরকারিভাবে ৫৭৮ মেট্রিক টন চালও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 
 গোলাম মোস্তফা নামে এক জমি মালিক বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিকে খাস খতিয়ানভুক্তি বাতিল এবং তাতে গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠার কাজ বন্ধ রাখার জন্য তারা গত ২৯ এপ্রিল বগুড়া জেলা প্রশাসকের দপ্তরে লিখিত আবেদন জানান। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও আবেদন করা হয়। তার পরেও গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠার কাজ বন্ধ না হওয়ায় গত ২ মে বগুড়ার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয় (নং১১৩/২০১৯ এবং ১১৪/২০১৯)।  শুনানী শেষে আদালত গত ৭ মে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন। কিন্তু তারপরেও কাজ বন্ধ রাখা হয়নি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ফসলি জমির অভাবে আমাদের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়বে। 
তবে যোগাযোগ করা হলে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়নকারী হাটশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি বলেন,‘সরকারি নথিপত্র অনুযাযী ওই জমিগুলো খাস সম্পত্তি। তাই সেখানে গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।’ আদালতের কারণ দর্শানো নোটিশ সত্ত্বেও কাজ বন্ধ না রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আদালত তো কাজ বন্ধ রাখতে বলেননি। তাছাড়া মামলা চলছে। দেখা যাক কি রায় আসে।’