দলীয় কার্যালয়ে আবারও তালা

বগুড়ায় বিএনপি ছাত্রদল যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৪ নেতা শাস্তির মুখোমুখি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১৬ মে ২০১৯ ১৪:২২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৫৩ বার।

বগুড়ায় আভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে অবশেষে কেন্দ্র থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করা হয়েছে। সদ্য গঠিত বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় মূল দল ছাড়াও এর অঙ্গ ও সহযোগী সগঠনের ১৪ নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, এর পরেও যদি কোন্দল নিরসন না হয় তাহলে শাস্তির আওতা আরও বাড়তে পারে।
যাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তারা হলেন: বিএনপির বিলুপ্ত বগুড়া জেলা কমিটির তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বিটু, সাবেক নেতা দেলোয়ার হোসেন পশারী হিরু, ছাত্রদল বগুড়া জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু জাফর জেমস্, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম আওয়াল, স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, শহর কমিটির সভাপতি মাহবুব হোসেন লেমন ও শহর কমিটির নেতা আবু সাঈদ দুখু, যুবদল বগুড়া জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুকুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পদাক জুম্মন আলী শেখ, সহ দপ্তর সম্পদাক মমিন আকন্দ ও দুই সদস্য বুলবুল হোসেন এবং আব্দুল্লাহ্ আল মামুন।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, আহবায়ক কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বিএনপি, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ৮ নেতার পদ স্থগিত এবং যুবদলের ৬ নেতাকে বহিস্কার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিএনপি, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত ১৪ নেতার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। 
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, মূলত তারেক রহমানের নির্দেশে গঠিত আহবায়ক কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ, বিক্ষোভ প্রদর্শন, দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলানো, নতুন আহবায়ক সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) সিরাজের কুশপুত্তলিকা দাহ করার মত কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দেওয়া, আরেক সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর বাসভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং মোটর সাইকেল ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বগুড়ায় মেয়াদ উত্তীর্ণ বিএনপি’র পুনর্গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আভ্যন্তরীণ বিরোধ চলে আসছে। ওই বিরোধের জের ধরে গত ২৯ এপ্রিল দুই গ্রুপে পাল্টাপাল্টি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এক পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন দলের তৎকালীন জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং অপর পক্ষে ছিলেন সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান। তার আগে গত ২৫ এপ্রিল ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বগুড়া বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আয়োজিত সভায় সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে অশোভন আচরণ করায় তৎকালীন দলের জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস এবং প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাহ্ মেহেদী হাসান হিমুর পদ-পদবী স্থগিত করা হয়। এর প্রতিবাদে ওইদিন রাতেই দলের জেলা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এবং পরদিন সাবেক সাংসদ সিরাজের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। অবশ্য ২৬ এপ্রিল রাতে আবার দলীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া হয়।
দলের পুনর্গঠন নিয়ে দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি আহবায়ক কমিটি গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ মে বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ১৫ মে সাবেক সাংসদ জি,এম সিরাজকে প্রধান করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তবে ঘোষিত ওই কমিটি নিয়ে আভ্যন্তরীণ বিরোধ আরও তুঙ্গে উঠেছে। ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে এদিন রাতে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং আহবায়ক সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
তবে ‘অবাধ্য’ নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরেনি। বুধবার ইফতারের পর তাদের লাগানো তালা তারাবীর নামাজের পর আহবায়ক কমিটির সদস্যরা খুলে ফেললেও সাংগঠনিক শাস্তি পাওয়া নেতা এবং তাদের অনুসারীরা বৃহস্পতিবার বিকেলে আবারও দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা সেখানে সমাবেশ করছিলেন। তবে আহবায়ক কমিটির পক্ষের কাউকে সেখানে দেখা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আহবায়ক কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার দলীয় কার্যালয়ে ইফতার করবেন-এমন খবর পেয়েই তাদের বিরোধীরা আগে-ভাগেই সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। পদবী স্থগিত হয়ে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু জানান, ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠনের নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ করার কারণে তাকেসহ অনেকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এর পরেও আমরা পিছপা হব না। গঠিত আহবায়ক কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।’
অপরদিকে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম খাদেম জানান, তারেক রহমানের নির্দেশনা যারা অমান্য করেছে তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নতুন আহবায়ক কমিটির পক্ষের অপর নেতা বিলুপ্ত জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলী আজগর হেনা বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি করতে হলে তারেক রহমানের নির্দেশ মানতে হবে। যারা এর বিরুদ্ধে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে দল পরিচালিত হচ্ছে। এখানে আমাকে মাত্র ৩ মাসের জন্য একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন দলের দুঃসময় চলছে। আমি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানাচ্ছি। যাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তারা যদি দলের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে আমি তাদের শাস্তি প্রত্যাহারের পক্ষে সুপারিশ করবো। তবে অপর পক্ষের নেতা জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। সমকালকে তিনি বলেন, ‘আমি এখন কোন দায়িত্বে নেই। তাই এসব বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করারও সমীচিন হবে না।’