বগুড়ার রানার প্লাজায় বখাটেদের উৎপাতের অভিযোগ

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ মে ২০১৯ ১৫:২৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩১৪৯ বার।

বগুড়ার অত্যাধুনিক শপিং মল ‘রানার প্লাজা’য় বখাটেদের উৎপাত বেড়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বহুতল ওই শপিং মলের বিভিন্ন ফ্লোর এবং লিফটে বখাটেদের উৎপাতে কেনা-কাটা করতে কিংবা খেতে যাওয়া স্কুল-কলেজগামী মেয়েরা চরম বিব্রত হচ্ছেন। এমনকি তাদের বখাটেপনা থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী কর্মীরাও রেহায় পাচ্ছেন না। রানার প্লাজায় বখাটেদের এমন তৎপরতার খবর এখন সোস্যাল মিডিয়াতেওই ঠাঁই করে নিয়েছে। 
Foodbank Bogra নামে ফেসবুকে খোলা একটি গ্রুপে গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার এক নারী Off topic  শিরোনামে ২১ লাইনের একটি লেখায় রানার প্লাজায় সংঘটিত বখাটেপনার কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন। সেখানে ২২ মে ওই শপিং মলের ভেতরে মোবাইল ফোন বেচা-কেনার জন্য নির্ধারিত ফ্লোরে এক মহিলা কর্মীকে লক্ষ্য করে করা নোংরা আচরণের কথা বলা হয়েছে। ওই নারী সেখানে লিখেছেন, ‘গতকালের (২২ মে) ঘটনা বলি। আমরা লিফটে উঠব, ফ্লোরটা মোবাইল এর। অনেক ছেলে বসে আছে। একটা আপু (ওখানকার একটা শপে কাজ করেন) হেঁটে যাচ্ছেন, বসে থাকা ছেলেগুলো এত নোংরামি করলো আপুটার সাথে। আমারই গা জ্বলে যাচ্ছিল।’
লেখার একটি অংশে ফ্রিতে এসির বাতাস খেতে আসা বখাটেদের উচ্ছেদের অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘রানার প্লাজার বাহির নিরাপদ। কিন্তু প্লাজার ভেতরে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো বখাটে ছেলেরা মেয়েদের ছাড় দিচ্ছে না এটা কর্তৃপক্ষের নজরে কবে পড়বে?’ লেখক তার লেখার শেষ দিকে বখাটেদের ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে তুলনা করে লিখেছেন, ‘এত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটা জায়গার ভিতরে এভাবে ময়লা আবর্জনা জমতে থাকলে তো মেয়েদের জন্য আর জায়গাটা নিরাপদ থাকবে না।’

Foodbank Bogra নামে ফেসবুকের গ্রুপে ওই লেখা নজরে পড়ার পর পুণ্ড্রকথা’র পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। পুণ্ড্রকথা’র দু’জন রিপোর্টার শপিং মলের প্রতিটি ফ্লোর ঘুরে বখাটেদের তৎপরতা স্বচক্ষে দেখতে পান। প্রায় এক ঘন্টা অবস্থানকালে তারা দেখেন, প্রায় প্রতিটি ফ্লোরেই বখাটেদের আড্ডা চলে। নারী ক্রেতারা যখন লিফট দিয়ে নিচতলা থেকে উপরতলায় উঠেন তখন কিছু বখাটে তাদের পিছু নেয়। তারা বিভিন্নভাবে ওই নারীদের উত্যক্ত করছে।
সোহেল আহমেদ নামে এক দোকানি বখাদের তৎপরতার কথা স্বীকার করে পুণ্ড্রকথাকে বলেন, ভেতরে সকাল থেকে সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে ৪জন করে নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে। কিন্তু তার পরেও বখাটেদের তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। অপর এক দোকানি জানান, স্কুল পড়ুয়া কিছু মেয়ে দিনের বেলায় শপিং মলের ভেতরে ঢুকে তাদের ছেলে বন্ধুকে ডেকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয়। কিছুদিন আগে কলেজ পড়ুয়া ছেলে ও মেয়ে বন্ধুকে সেখানকার এক বাথরুমে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর অভিভাবকদের ডেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে যেখানেই কোন ছেলে এবং মেয়েকে এক সঙ্গে বসে থাকতে দেখা গেলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাদের শপিং মল ছেড়ে যেতে বলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি পুণ্ড্রকথাকে বলেন, মূলত শপিংমলটি কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় অনেকেই এটিকে তাদের আড্ডাস্থলে পরিণত করেছে। এভাবে সেখানে বখাটের উপস্থিতিও বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘রানার প্লাজা কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ যদি এখনই বখাটেদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তাদের তৎপরতা আরও বাড়তে পারে। তখন মান-সম্মান হারানোর ভয়ে নারীরা কেনা-কাটার জন্য এখানে নাও আসতে পারেন। আর এটা হলে আমরা ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
এ বিষয়ে মার্কেট ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত সাইরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে নারী কর্মীর সঙ্গে অশালীন আচরণের কথা বলা হচ্ছে ইচ্ছে করলে তিনি তার প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছে অভিযোগ দিতে পারতেন। তবে তার পরেও আমরা বিষয়টি দেখবো। আমরা এব্যাপারে পুলিশের সহযোগিতা চাইবো। বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী পুণ্ড্রকথাকে বলেন, ‘এধরনের কিছু কথা আমাদেরও কানে এসেছে। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’