বগুড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নুরুর ওপর ছাত্রলীগের হামলা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২৬ মে ২০১৯ ১৩:৪৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫৭৩ বার।

বগুড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরুসহ তার সহযোগীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। রোববার বিকেল ৫টার দিকে শহরের উডবার্ণ সরকারি গণগ্রন্থাগারের সামনে ওই হামলা চালানো হয়। এতে ভিপি নূরুল হক নুর এবং তার সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ১৩ নেতা-কর্মী ও এক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা বগুড়ায় এক ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে এসেছিলেন। 
আহতদের মধ্যে নুরুল হক নুরুসহ ৪জন পরে বগুড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে চিকিৎসকরা তাদেরকে ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দিলেও নিরাপত্তার কারণে তারা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে নুরুল হক নুরু কোটা আন্দোলনে জড়িত শিবির কর্মীদের নিয়ে সমাবেশ করার চেষ্টা করছিল বলে সাধারণ ছাত্ররা তাদের বাধা দিয়েছে। এতে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয়।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বগুড়া জেলা কমিটির আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানান, তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে রোববার বিকেলে শহরের উডবার্ণ সরকারি গণগ্রন্থাহার মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরুসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। তার পাশেই শহীদ টিটু মিলনায়তনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তিনি জানান, পাশাপাশি দু’টি স্থানে দু’টি সংগঠনের এমন কর্মসূচী থাকায় গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের সংগঠনকে কর্মসূচী পালন না করতে বলা হয়। তিনি বলেন, ‘সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েও কোন কিছু করতে চাচ্ছিলাম না। আমরা শুধু বসে ছিলাম যে ভিপি নুরুল হক নুরুসহ ঢাকা থেকে যারা আসছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে চলে যাব। কিন্তু বিকেল ৫টার দিকে তারা আসার পর পরই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়। ছবি তুলতে গিয়ে যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরা পার্সন শাহ্ নেওয়াজ শাওনও আহত হয়। 
ভিপি নূরের সঙ্গে আসা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক মশিউর রহমান জানান, তারা একটি মাইক্রোবাসে ১৩জন ঢাকা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিকেল ৫টার একটু পরে অনুষ্ঠান স্থলে এসে নামার সঙ্গে সঙ্গে ৫০/৬০ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী আমাদের ওপর চড়াও হয় এবং এলোপাথারী মারপিট শুরু করে। একই সময় তারা মিলনায়তনের ভেতরেও ভাংচুর চালায়। পরে আমাদের সংগঠনের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিয়ে যান।’
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জরুরী মেডিকেল অফিসার ডা. রোকাইয়া আক্তার অ্যানি জানান, ভিপি নুরুল হক নুরু, রাতুল, আপন ও ফারুক নামে ৪জন এসেছিলেন চিকিৎসা নিতে। এদের মধ্যে নুরুর মুখ, কপাল ও পায়ে জখম ছিল। আপনের ঘাড়ে, রাতুলের পায়ে এবং ফারুকের শরীরের একাধিক স্থানে জখম ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা ওই ৪জনকে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা ভর্তি না হয়েই চলে গেছে।’ যোগাযোগ করা হলে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক মশিউর রহমান জানান, নিরাপত্তার অভাবে তারা হাসপাতাল ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে গেছেন।’ পরে সন্ধ্যা ৭টায় ভিপি নুরুল হক নুরুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রুবেল নামে তার এক বন্ধু বলেন, ‘আমরা এখন ঢাকার পথে।’
হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ জানান, তারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইফতার মাহফিলে যাওয়ার জন্য উডবার্ণ সরকারি গণগ্রন্থাহারের সামনে দিয়ে আসার সময় হট্টগোল শুনতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পরে দেখেছি কারা যেন নুরুকে মেরেছে। তখন ছাত্রলীগের ছেলেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।’ তবে তার সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস বলেন, ‘ভিপি নুরুল হক নুরু কোট আন্দোলনকারী শিবির কর্মীদের নিয়ে সভার আয়োজন করেছিল। সাধারণ ছাত্ররা তার কাছে গিয়ে জানতে চায় তিনি কেন শিবিরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করতে এসেছেন। তখন সে উত্তেজিত হয়ে বলতে শুরু করে, আমরা কাদের নিয়ে কি করবো সেটি আমাদের বিষয়। তার একথায় সাধারণ ছাত্ররা উত্তেজিত হয় তাদের প্রতিরোধ করে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়নি।’
বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের স্থানীয় নেতা রাকিবুল ইসলাম রাকিব আমাদের কাছে তাদের প্রোগ্রামের অনুমতি চেয়েছিল। তাদের বলা হয়েছিল অনুমতি দেয় ডিএসবি। কিন্তু যতদূর জানা গেছে ডিএসবিও তাদের অনুমতি দেয়নি। তিনি বলেন, তার পরেও তারা এখানে প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিল। তবে আমরা আসার আগেই শুনি ভিপি নূরসহ কয়েকজনের ওপর হামলা হয়েছে এবং তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ কারা হামলা চালিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আমরা এখনও জানতে পারিনি।’