ডিসি অফিসের সাবেক পিয়ন কোটি টাকার মালিক, দুদকের মামলা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ মে ২০১৯ ১৩:৩৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫৪ বার।

উমেদার থেকে জমিদার, হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়া সাবেক পিয়ন মান্নান তালুকদারের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ১১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তা পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাওন মিয়া বাগেরহাট সদর থানায় এই মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী মো. শাওন মিয়া এ তথ্য জানান। খবর বাংলা ট্রিবিউন  

দুদকের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাওন মিয়া বলেন, ‘মামলায় নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান তালুকদার ছাড়াও তার ভাই প্রতিষ্ঠানটিরও চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।’

মো. শাওন মিয়া আরও বলেন, ‘খুলনা, বাগেরহাট ও এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা আমরা জেনেছি। মান্নান তালুকদারের বিরুদ্ধে ১১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তা পাচারের অভিযোগে বাগেরহাট সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মান্নান তালুকদার কোথায় আছেন, আমরা খুঁজে বের করবো। তিনি যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য তার পাসপোর্টের সব তথ্য ইমিগ্রেশনে দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে, দুদক সূত্র জানায়, মান্নান তালুকদার তার বাগেরহাটের কোনও জমি যেন বিক্রি করতে না পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে রেজিস্ট্রি অফিসকে বলা হয়েছে।

এর আগে, গত ২৪ জানুয়ারি বাংলা ট্রিবিউনে ‘সাবেক পিয়ন চার হাজার কোটি টাকার মালিক!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। অবশ্য তখন আবদুল মান্নান অভিযোগটি অস্বীকার করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের প্রমাণ মেলে। তার দুর্নীতি আর প্রতারণার বিষয়ে তদন্ত শুরু হলে পরিবারসহ তিনি গাঢাকা দেন।

জানা গেছে, চার বছরে আমানত দ্বিগুণ করে দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে বাগেরহাট ডিসি (জেলা প্রশাসক) অফিসের সাবেক পিয়ন (এমএলএসএস) আবদুল মান্নান তালুকদারের বিরুদ্ধে। এই টাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন বেশ কয়েকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট নামে কোম্পানি খুলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে আমানত সংগ্রহ করেন আবদুল মান্নান। তার সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানটি শুধু উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়েই নয়, মানুষকে আকৃষ্ট করতে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংকিংয়ের মতো লভ্যাংশ দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিতো।

বাগেরহাট সদর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া অর্থের ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার ৩৫ টাকা পাচার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উমেদার পদে নিয়োগ পান মান্নান। ২০১০ সাল পর্যন্ত চাকরি করার পর স্বেচ্ছায় অবসরে যান। এরপর নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের নামে মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সাইনবোর্ড ও কাগজপত্রে লেখা রয়েছে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত (রেজি. নং-সি ৮৯১১৪/২০১০)।