বগুড়া সদর থানায় আটক ব্যক্তিকে অমানুষিক নির্যাতন: এসআইসহ ৪ পুলিশ সাসপেন্ড

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০১৯ ১৪:১৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯২০ বার।

বগুড়ায় সোহান বাবু আদর (৩১) নামে এক ব্যক্তিকে থানায় ১৮ ঘন্টা আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার দুপুর নাগাদ ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর নির্যাতনকারী পুলিশের তিন কর্মকর্তাসহ ৪ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তারা হলেন- বগুড়া সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) আব্দুল জোব্বার, সহকারি সাব ইন্সপেক্টর (এএসআই) এরশাদ আলী, নিয়ামত উল্লাহ ও কনস্টেবল এনামুল হক। অভিযুক্তদেরকে পুলিশ লাইনে ক্লোজও করা হয়েছে। পুলিশী নির্যাতনে আহত আদর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্বজন, এলাকাবাসী এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জ এলাকার সাইদুর রহমানের ছেলে সোহান বাবু আদর তার পরিচিত বাপ্পি মিয়া এবং তার স্ত্রী সাথী বানুর সঙ্গে ‘আল ফালাহ বহুমুখী সমবায় সমিতি’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। বাড়ির পাশে গোয়ালগাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা ওই সমিতি সুদের বিনিময়ে ঋণ দিত। তবে সমিতির টাকা-পয়সা নিয়ে তাদের মধ্যে সম্প্রতি বিরোধ দেখা দেয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোহান বাবু আদর জানান, সাথী বানুর সঙ্গে সদর থানার কনস্টেবল এনামুল হকের আগে থেকেই পরিচয় রয়েছে। সেই সূত্র ধরে গত ১৩ জুন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কনস্টেবল এনামুল তাকে ফোনে সদর থানায় ডেকে নেয়। এরপর সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল জোব্বার তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে থানার হাজতখানায় পাঠায়। তখন এএসআই এরশাদও সেখানে ছিল। পরে রাত ১২টার দিকে এএসআই নিয়ামত উল্লাহ্্ তার সহকর্মী এএসআই এনামুলের সহায়তায় হাজত খানা থেকে তাকে হাতকড়াসহ বের করে এনে একটি পিলারের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক পেটায়। আদর বলেন, ‘আমি এএসআই নিয়ামত উল্লাহ্ পা ধরে তাকে ভাই সম্বোধন করে না মারার জন্য অনুরোধ করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ভাই বলার অপরাধে আমাকে আরও মারপিট করেন। আমার শ্বাস কষ্ট রয়েছে। মারপিটের কারণে শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেলে আমি ইনহেলার নিতে চাই। কিন্তু তিনি আমাকে সেটিও নিতে দেননি। পরদিন শুক্রবার দুপুরে ২০ হাজার টাকা বিনিময়ে মুচলেকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’ 
শুক্রবার দুপুর আড়াইর দিকে সোহান বাবু আদরকে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের বিষয়টি জানাজানি হয়। স্বজনদের পক্ষ থেকে নির্যাতিত আদরের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করা হয়। তাতে দেখা যায় তার কোমড়, নিতম্ব এবং দুই পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। নির্যাতিত আদরের বাবা সাইদুর রহমান অভিযোগ করেছেন, থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার সময় যে মুচলেকা লিখে নেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে ‘আদরকে সুস্থ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।’
বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, সাথী বানু নামে এক নারী গত ১৩ জুন আদরের বিরুদ্ধে পাওনা আড়াই লাখ টাকা না দেওয়া এবং তার মেয়েকে কলেজে আসা-যাওয়ার পথে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগপটি পাওয়ার পর সেটি তদন্তের জন্য সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল জোব্বারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরদিন ১৪ জুন শুক্রবার দুপুরে অভিযোগকারী সাথী বানু থানায় এসে তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিলে আদরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আদরের ওপর নির্যাতন চালানোর বিষয়টি তার জানা ছিল না। এমনকি থানা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় আদরও বিষয়টি আমাকে জানননি। তবে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি এবং সঙ্গে সঙ্গে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আরিফুর রহমান মণ্ডল নির্যাতিত আদরকে দেখতে শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে যান এবং তার সঙ্গে কথা বলেন। বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, ঘটনাটি জানার পর পরই রাজশাহীতে অবস্থানরত পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞাকে তা অবহিত করা হয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর পরই পুলিশের ওই চার সদস্যের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে পুলিশ লাইনে ক্লোজও করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্যাতিত আদরের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ চাওয়া হয়েছে। সেটা পেলে ওই চার সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হবে।’