কেন্দ্রগুলোতে হাজির ছিলেন মাত্র ১ শতাংশ ভোটার

বগুড়ায় ইভিএম-এ ভোট দেখানোর জন্য ইসি’র উদ্যোগে সাড়া মেলেনি

অরূপ রতন শীল ও দোস্ত আউয়াল
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০১৯ ১৩:৪৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২১১ বার।

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম-এ কিভাবে ভোট গ্রহণ করা হয় তা দেখানোর জন্য বগুড়ায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে ভোটারদের সাড়া মেলেনি। বগুড়া-৬ (সদর) আসনের প্রতিটি কেন্দ্রে ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ পদ্ধতি দেখানোর জন্য গত দুই দিনের ভোটার অবহিতকরণ কর্মসূচীতে ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই নগন্য। তবে যারা আগ্রহ নিয়ে ভোট দেখতে এসেছেন তারা ইভিএম-এর কার্যকারিতা দেখে সন্তুষ্ট।
নির্বাচন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে বগুড়া সদর আসনে ১৪১টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে গড়ে ২ হাজার ৭৪৭জন করে ভোটার রয়েছেন। আর গত ১৭ ও ১৮ জুন ওই কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচন কার্যালয় থেকে নেওয়া ইভিএমে ভোট গ্রহণ পদ্ধতি দেখানোর দুই দিনের কর্মসূচীতে ভোটারদের গড় উপস্থিতি ছিল মাত্র ১ শতাংশ। 
ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ পদ্ধতি দেখানোর কর্মসূচীতে অংশ নিতে সদর উপজেলা জুড়ে মাইকিং, জনপ্রতিনিধি ও মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়েও ভোটারদের সাড়া না পাওয়ায় হতাশ নির্বাচন কর্মকর্তারা। তাদের অনেকে বলছেন, ছয় মাস আগে একবার ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবারের ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কম। যে কারণে ইভিএম নিয়েও তাদের মধ্যে কোন উদ্দীপনা কাজ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কার্যালয় থেকে ভোটের দুইদিন আগে ২২ জুন প্রতিটি কেন্দ্রে ইভিএম নিয়ে যে মক ভোটের আয়োজন করেছে তাতে আদৌ কোন সাড়া পড়বে কি’না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচিত হন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি শপথ না নেওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশন আগামী ২৪ জুন ওই শূন্য আসনে ভোট গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছে। নির্বাচনে মোট ৭জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৮জন। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯০জন এবং পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৯১ হাজার ৬৬৮জন। মোট ১৪১টি কেন্দ্রের ৯৬৫টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। 
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বগুড়ায় সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের ইভিএম-এ ভাট গ্রহণের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোটারদের ইভিএমে ভোট দান পদ্ধতি দেখানোর জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে গত ১৭ এবং ১৮জুন কেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষিত কর্মকর্তাসহ ইভিএম পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে মাইকিং করা হয় এবং পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারও চালানো হয়।
শহরের কাটনারপাড়া এলাকার করনেশন স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৭ জুন সারাদিনে সেখানে মাত্র ১১জন  ভোটার ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ দেখতে গিয়েছিলেন। পরদিন ১৮ জুন দুপুর পর্যন্ত উপস্থিত হয়েছিলেন ৯জন। একই অবস্থা শহরতলীর ঝোপগাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও। প্রথম দিন ১৭ জুন ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ পদ্ধতি দেখার জন্য ওই কেন্দ্রে গিয়েছিলেন মাত্র ১৬জন ভোটার। আর দ্বিতীয় ১৮ জুন দুপুর পর্যন্ত গিয়েছিলেন ৬জন। উপ-শহরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে সহকারি প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পাওয়া গোলাম মোশের্শদ জানান, ১৭ জুন বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মাত্র ১৩জন ভোটার ইভিএম দেখতে গিয়েছিল। ১৮ জুন সকাল ১১ টা পর্যন্ত এসেছিল ৮জন।
 ঝোপগাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কথা হয় ইভিএম দেখতে আসা মিলন প্রমাণিক নামে এক ভোটারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ইভিএম সম্পর্কে অনেক বাজে ধারণা ছিল আমার। কিন্তু মেশিনটিতে ভোট দিতে গিয়ে দেখলাম সেখানে জাল ভোট দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া এক ব্যক্তি একাধিকবার ভোট দিতে গেলেও ধরা পড়বে। এই মেশিন তো ভাল।’ একই ধরনের মন্তব্য করেছেন আর্মড পাবলিক স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ইভিএম-এ ভোট প্রদান পদ্ধতি দেখতে আসা আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তিও।
তবে করনেশন স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রের সামনে ঘোরাঘুরি করলেও ভেতরে ইভিএম দেখতে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আব্দুস সামাদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ভোট দিতে যাব কি’না তারই ঠিক নাই। তো ইভিএম মেশিন দেখে কি হবে। যদি ভোটের দিন পরিবেশ ভাল থাকে তাহলে কেন্দ্রে যাব। তখন তখন ইভিএম-এ ভোট দেওয়অ শিখে নিলেই হবে।’
প্রচার-প্রচারণা সত্ত্বেও ইভিএম-এ ভোট প্রদান পদ্ধতি দেখার জন্য ভোটারদের আগ্রহ নেই কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বগুড়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সার্জিল আহম্মেদ টিপু বলেন, ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ তৈরির জন্য আরও সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিলে হয়তো ইভিএম দেখার জন্য কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি আরও বাড়তো।
তবে ইভিএম নিয়ে ভোটারদের তেমন আগ্রহ না থাকার কারণ জানতে চাইলে বগুড়ার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মাহবুব আলম শাহ্ জানান, এটা তাদের পক্ষে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। তাছাড়া আগামী ২২ জুন মক ভোটের আয়োজন করা হয়েছে। আশাকরি সেদিন ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে।’