গোপালগঞ্জে এক প্রভাবশালীর কারণে ৫৩ পরিবারের চাষাবাদ বন্ধ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০১৯ ০৫:১৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২০১ বার।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মাহমুদপুর বিলে প্রভাশালীর মৎস্য ঘেরের মধ্যে আটকা পড়ে ৫৩ সংখ্যালঘু পরিবারের ৫৫ বিঘা জমিতে ৪ বছর ধরে চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। চাষাবাদ করতে না পারায় পরিবারগুলো অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঘের মালিকের নির্যাতন-নিপীড়ণে পরিবারগুলো জমিতে যেতে না পেড়ে এখন দিশেহারা। খবর সমকাল অনলাইন 

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক তাপস বিশ্বাস  জানান, পার্শ্ববর্তী পারুলিয়া গ্রামের প্রভাবশালী ঠিকাদার দিদার হোসেন মাহমুদপুর বিলের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ৬২ বিঘা কৃষিজমি ক্রয় করেন। ২০১৫ সালের শেষদিকে বিল-সংলগ্ন পানিউন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছ থেকে ২.৩৭ একর জমি ইজারা নিয়ে মাছের ঘের করার জন্য বিলজুড়ে ‘মাতবর এ্যাগ্রো ফিসারিজ’ নামে মৎস্য প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। এরপর শুরু করেন বিলের চারপাশে বেড়ি বাঁধ নির্মাণ কাজ। সেই থেকেই প্রভাবশালীর কবল থেকে কৃষি জমি রক্ষায় ৫৩টি পরিবার আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে পাউবো ওই ইজারা বাতিল করে দেয়। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা গোপালগঞ্জ শহরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। কিন্তু কোন ফল হয়নি। বরং প্রভাবশালী দিদার হোসেন প্রশাসনের সকল নির্দেশ অমান্য করে প্রতিবছরই একটু একটু করে ৫৩ পরিবারের কৃষিজমি কেটে মৎস্য ঘেরের বাঁধের নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

তিনি জানান, সরকারি কোন লম্বা ছুটি শুরু হলেই তিনি বিলে স্কেভেটর নামিয়ে বাঁধ নির্মাণ করেন। প্রশাসনের বাধা না দেওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যান। এভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পুরো বিলটিকে মৎস্য ঘেরে পরিণত করে ফেলেছেন। এ বিলে প্রায় দেড় শ’ বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ বিঘা কৃষি জমির মালিক ৫৩ হিন্দু পরিবার। ৬২ বিঘার মালিক দিদার হোসেন। বাকি জমির মালিক সরকার।

ক্ষতিগ্রস্ত আরেক জমির মালিক শুকলাল সরকার বলেন, ৫৩টি সংখ্যালঘু পরিবারের ৫৫ বিঘা কৃষিজমি এখন ঘেরের মধ্যে পড়েছে। এ জমি পরিবারগুলোর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। 

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও মাহামুদপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বর আশীষ কুমার মিন্ত্রী জানান, বিলের তিন পাশে রয়েছে সরকারি খাল। এর মধ্যে বিলের উত্তর পাশে কুমার নদীর শাখা বলুগা-তেঁতুলিয়া খাল। সরকারিভাবে এটি খনন কাজের সময় ঠিকাদারকে ম্যানেজ করে দিদার বিলের এক পাশ বেঁধে নিয়েছেন। পশ্চিম পাশে রয়েছে এলজিইডি’র রাস্তা ও খাল। ওই খালটিও দখলে নেওয়ার জন্য দিদার খালের মুখে বাঁধ দিয়েছেন। পূর্বপাশে খালপাড়ও অনেক আগেই বেঁধে ফেলেছেন। আর দক্ষিণ পাশেও বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষের পথে। দিদার হোসেন তার সকল জমি পতিত রেখে ৩টি ব্লকের পানি সেচ বন্ধ করে দিয়েছেন ৪ বছর আগে। ৫৩ পরিবার সরকারি খাল থেকে পানি সেচ দিয়ে জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে দিদার হোসেন বাধা দেন। ফলে তারা জমি চাষাবাদ করতে পারছেন না। 

মাহামুদপুর গ্রামের পাইলট বিশ্বাস বলেন, গত রমজানের ঈদের লম্বা ছুটি শুরু হলে ঘের মালিক দিদার হোসেন রাতের আঁধারে স্কেভেটর দিয়ে ১ শ’ শ্রমিক বিলের জমিতে নামিয়ে দেন। ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা বাঁধা দিতে গেলে পিংকি বিশ্বাস (৩০) নামে এক গৃহবধূর শরীরে স্কেভেটরের মাটি ফেলা হয়। এতে তার শরীরের অর্ধেকাংশ মাটিতে দেবে যায়। পরে স্থানীয়রা ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করেন । গ্রামবাসী বিষয়টি গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসককে জানান। পরে কাশিয়ানীর ইউএনও এএসএম মাঈনউদ্দীন ও থানার ওসি আজিজুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। ততক্ষণে বিলের দক্ষিণ পাশের আরও প্রায় ৩’শ গজ বাঁধের কাজ সম্পন্ন করেন দিদার হোসেন। আর এভাবেই  দিদার হোসেন  গত ৪ বছরে বিলের চাদিকে বাঁধ নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। যেটুকু বাকি আছে, একটু সুযোগ পেলে সেটুকুও শেষ করবেন। প্রভাবশালী দিদার হোসেনের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেতে ৫৩টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। 

এ ব্যাপারে দিদার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কাল-পরশু বলে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সংবাদিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।  

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, একজন ব্যক্তি অবৈধভাবে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষি জমির ক্ষতি হয় এমন কিছু কার্যকলাপ করছেন। খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক কাশিয়ানীর ইউএনও এবং ওসিকে নির্দেশ দিলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্কেভেটর তুলে দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন। ইতোমধ্যে ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়েছে। তারা কথা দিয়েছেন; খুব শিগগির এটির শান্তিপূর্ণ স্থায়ী সমাধান হবে।