রিজভীকে লাঞ্ছনা: ইন্ধনদাতা‌দের নাম প্রকাশ কর‌বে ক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০১৯ ০৮:০১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩১ বার।

রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে লাঞ্ছিত করাসহ প্রতিটি অপ্রীতিকর ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে ক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠনসহ সাত দফা দাবি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠনে বিলম্ব দেখে ইন্ধনদাতাদের নাম প্রকাশের নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

ক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাদের দাবি ওই ঘটনায় সার্চ কমিটিতে থাকা একা‌ধিক নেতাসহ বিএন‌পির জ্যেষ্ঠ অনেক নেতার ইন্ধন ছিল। যা প্রমাণসহ তারা জনসম্মু‌খে প্রকা‌শ করবেন। দুএক‌দি‌নের ম‌ধ্যে সংকট সমাধান না হ‌লে সংবাদ স‌ম্মেলন ক‌রে ইন্ধনদাতা‌দের নাম প্রকাশ করা হবে।

নাম প্রকা‌শে অনিচ্ছুক ছাত্রদ‌লের সা‌বেক একজন সহ-সভাপতি বলেন, সার্চ কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা তাদেরকে বলেছিলেন রুহুল ক‌বির রিজভীকে কার্যালয় থে‌কে জোর ক‌রে বের করে দিতে। তারা বলেছিলেন নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দিতে, ভাংচুর কর‌তে। কিন্তু আমরা যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি তা তো করতেই দিইনি। উল্টো আন্দোলন চলাকালে কার্যালয়ের মূল ফটকে পাহারা দিয়েছি যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

তিনি বলেন, আমরা জে‌নে‌ছি ওইদিন রিজভীকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের করতে অ্যাম্বুলেন্সও এনেছিল সার্চ কমিটি, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার বিল দিয়েছেন সার্চ কমিটির এক নেতা। ছাত্রদলের এই নেতা ব‌লেন, যারা সেদিন ইন্ধন দি‌য়ে‌ছি‌লেন তারাই আজ আবার ছাত্রদল নি‌য়ে রাজনী‌তি শুরু ক‌রে‌ছেন। সংকট সমাধানের প‌রিব‌র্তে তারাই সংকট‌কে আরও ঘনীভূত কর‌ছেন, যা অনাকা‌ঙ্খিত। খবর যুগান

এদিকে উদ্ভুত প‌রি‌স্থি‌তি‌তে বিএন‌পির ভ্যানগার্ড হি‌সে‌বে খ্যাত ছাত্রদলের সংকট সহসাই কাট‌ছে না। ক্ষুব্ধ নেতা‌দের দা‌বি অনুযায়ী আহ্বায়ক ক‌মি‌টি গঠ‌নে রা‌জি হয় নি সংগঠন‌টির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটির নেতারা। এই অবস্থায় ফের আন্দোল‌নে যাওয়ার ইঙ্গিত দি‌য়ে‌ছেন ক্ষুব্ধ নেতারা।

এদি‌কে ছাত্রদলের সংকট সমাধানে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থায়ী কমিটির দুই নেতা মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সড়ে দাঁড়াতে চাইছেন। সার্চ কমিটির নেতাদের আচরণ ‘সম্মানজনক’ না হওয়ায় তারা সড়ে দাঁড়াতে চাইছেন বলে দুই নেতা‌র ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্কাইপের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আব্বাস ও গয়েশ্বর ছাত্রদলের চলমান সংকট নি‌য়ে বিস্তা‌রিত কথা বলেছেন। আজ দুপু‌রে ক্ষুব্ধ নেতা‌দের স‌ঙ্গেও দুই নেতার বৈঠ‌কের কথা র‌য়ে‌ছে।

ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতারা বলেন, সার্চ কমিটির নেতাদের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থায়ী কমিটির দুই নেতার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে লাঞ্জিত করাসহ প্রতিটি অপ্রীতিকর ঘটনার তদন্ত দাবি করেছি। ওই ঘটনায় সার্চ কমিটিতে থাকা একা‌ধিক নেতাসহ বিএন‌পিরও সি‌নিয়র অ‌নে‌কের ইন্ধন ছিল, যা খুঁজে বের করতে হবে।

বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ছাত্রদলের কমিটি ৩ জুন বিলুপ্ত করার পর সৃষ্ট সঙ্কট সমাধানে সার্চ কমিটি ব্যর্থ হলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্রকে দায়িত্ব দেন। তারা দ্রুত বিষয়টি সমাধানের দিকেও নিয়ে যান। এ নি‌য়ে গত শুক্রবার অনু‌ষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ধন্যবাদ জানানো হয়।

ওই বৈঠকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এই ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু সম্প্রতি সার্চ কমিটির কোনো কোনো নেতার কর্মকাণ্ড তাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। সার্চ কমিটির কর্মকাণ্ডে মনে হয়েছে, আব্বাস-গয়েশ্বর এবং সার্চ কমিটি মুখোমুখী অবস্থানে। যা দলের এবং ওই দুই নেতার জন্য সম্মানজন নয়। একারণেই তারা সরে দাঁড়াতে চাইছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমরা ছাত্রদলের সবার সঙ্গে কথা বলে পরি‌স্থি‌তি শান্ত করাসহ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছি। বিষয়গুলো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও জানেন। এখন বাকি যে কাজ আছে তা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা সমাধান করতে পারবেন। তবে, প্রয়োজন হলে যেকোনো সহযোগিতা তাদের প্রতি থাকবে।

সার্চ কমিটি ও ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গে‌ছে, ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতারা তারেক রহমানের সব সিদ্ধান্ত মেনে তারা সার্চ কমিটির অধীনে একটি সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির দাবি করেছিলেন। যার নাম 'আহ্বায়ক ক‌মি‌টি' হ‌তে পা‌রে ব‌লে জানান। কিন্তু স্থায়ী কমিটির দুই নেতা চাইলেও সার্চ কমিটির নেতারা তা মানতে চান না। বরং সার্চ কমিটি গত মঙ্গলবার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ক্ষুব্ধ নেতা‌দের সঙ্গে কথা বলে তাদের ক্ষোভ প্রশমন করবেন। এজন্য যার যার অনুসারীকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বও ভাগ করে নিয়েছেন।

সার্চ কমিটির অন্যতম নেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন যুগান্তর‌কে বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিলের জন্য তিনটি কমিটি করা হয়েছে। নির্বাচনের শিডিউলও ঘোষণা করা হয়েছে। যেহেতু ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন করে আবার আহ্বায়ক কমিটি করলে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হবে। এটা গঠনতন্ত্রের পরীপন্থির পর্যায়েও। তারপর আবার এখানে কে আহ্বায়ক হবে, কে ভোটার হবে তা নিয়েও অনেক সমস্যা। এসব নিয়ে অমরা অনেক পর্যালোচনা করেই এখন একটা সিদ্ধান্তে পৌছেছি।

তিনি বলেন, ক্ষুব্ধ নেতাদের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা, আগামী দিনে দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে, মূল দলে, এলাকায় যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদেরকে অবশ্যই সব জায়গায় মূল্যায়িত করা হবে। তারা আমাদের ছোট ভাই। তাদের দলে অনেক ত্যাগ রয়েছে, মামলা-হামলায় তারা জর্জরিত, জেল খেটেছেন। তাদের বিষয়টিও আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। তাদেরকে নিয়ে আমরা সব কিছু করবো। তাদের সঙ্গে কথা বলেই ছাত্রদলের কাউন্সিলের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

ছাত্রদ‌লের সা‌বেক এক সহ সভাপ‌তি যুগান্তর‌কে ব‌লেন, নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণে ২০০০ সালে এসএসসি পাসের বাধ্যবাধকতাও আমরা মেনে নিয়েছি। আমরা নির্বাচন পরিচালনাসহ তিন কমিটি মেনেই কাউন্সিল করতে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের দাবি করেছি। সুতরাং আমাদেরকে নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে কারও প্রশ্ন থাকতে পারে না। আমরা দ্বা‌য়িত্বপ্রাপ্ত স্থায়ী ক‌মি‌টির সদস্যে‌দের প্র‌তি আস্থাশীল। আমা‌দের নেতা তা‌রেক রহমানও আমা‌দের বিষয়‌টি বি‌বেচনা কর‌বেন।

ছাত্রদলের তফসিল অনুযায়ি,আগামী ১৫ জুলাই ভোটগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও সংগঠনের সঙ্কট সমাধান না হওয়ায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ফরমই বিক্রি করতে পারেনি। জানা গে‌ছে, চল‌তি মা‌সের শে‌ষের দি‌কে কাউন্সিল করার প্রস্তু‌তি নি‌চ্ছে সার্চ ক‌মি‌টির নেতারা।