রংপুরের বাসভবন পল্লীনিবাসের পাশে তার হাতে গড়া লিচুবাগানে তাকে সমাহিত করার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছে

এরশাদকে দাফনে কবর প্রস্তুত রংপুরে

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৯ ০৪:২০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৬৪ বার।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে তার নিজ জেলা রংপুরে দাফন করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে এরশাদের রংপুরের বাসভবন পল্লীনিবাসের পাশে তার হাতে গড়া লিচুবাগানে তাকে সমাহিত করার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছে। খবর সমকাল অনলাইন

মঙ্গলবার নগরীর কালেক্টর ঈদগাহ ময়দানে এরশাদের জানাজার সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। জানাজায় লোকসমাগম বাড়াতে সোমবারও নগরীতে মাইকিং করা হয়েছে। সেন্ট্রাল রোডে দলীয় কার্যালয়ে এখনও চলছে শোকের মাতম। উত্তোলন করা হয়েছে শোকের পতাকা। কার্যালয় ঘিরে টানানো  হয়েছে অজস্র ব্যানার। কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন  জাপার নেতাকর্মীরা। 

এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করার দাবিতে সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জাপার রংপুর-রাজশাহী বিভাগের নেতাকর্মীরা। দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টি সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, উত্তরাঞ্চলের মানুষ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে লালন করে রেখেছিল। তাই আমরা চাই তার সমাধি রংপুরে হোক। 

মঙ্গলবার যথাযোগ্য মর্যাদায় এরশাদের মরদেহ কালেক্টর ঈদগাহ মাঠে আনা হবে জানিয়ে মেয়র মোস্তফা আরও বলেন, সেখানে বৃহৎ জানাজা হবে। যখন এরশাদের দুঃসময় ছিল, তখন লাখো জনতার ঢল নেমেছিল- সেটি আমরা আবার দেখতে পাব। যে পল্লীনিবাস থেকে তিনি রাজনীতি করেছেন, যে পল্লীনিবাসকে তিনি নতুনভাবে গড়েছেন, সেখানেই তাকে সমাহিত করা হবে। 

এরশাদের লাশ ঢাকায় এনে সমাহিত করার চেষ্টা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে তিনি আরও বলেন, রংপুরের মানুষ ফুঁসে উঠলে কী অবস্থা হয়, বিগত দিনের ইতিহাস ঘাঁটলে  বোঝা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের পুত্রবধূ। তিনি আমাদের মনের কথা বোঝেন। আমরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে পল্লীবন্ধুকে রংপুরে দাফন করতে পারি, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তিনি নেবেন বলে আশা করছি। 

সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির অভিযোগ করেন, খারাপ আবহাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে এরশাদের লাশ রংপুরে না আনার ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারিও দেন জাপার এই নেতা। 

রংপুরে এরশাদের বাসভবন 'পল্লীনিবাস'-এর পাশেই তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত মকবুল হোসেন জেনারেল ও ডায়াবেটিক হাসপাতাল। এই হাসপাতালের লিচুগাছের তলায় এরশাদকে সমাহিত করার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছে জাপার স্থানীয় নেতাকর্মীদের উদ্যোগে। সোমবার বিকেলে সিটি মেয়র মোস্তফাসহ জাপার নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে জায়গা নির্ধারণের পর কবর খোঁড়ার কাজ শুরু হয়। 

রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে প্রতি কোরবানির ঈদে নামাজ আদায় করতেন এরশাদ। ২০০৬ সালে তিনিই এই ঈদগাহ মাঠের মেহরাব উদ্বোধন করেন। সেখানেই তার জানাজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মেহরাবের সামনে এরশাদের লাশ রাখার জন্য ত্রিপল ও শামিয়ানা টানিয়ে এর নিচে আলাদা একটি মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পাশেই সাদা কাপড় দিয়ে বানানো হয়েছে বেষ্টনী। গোটা ঈদগাহ মাঠে লাগানো হয়েছে প্যান্ডেল। মাঠ পরিচ্ছন্ন করে চারপাশে মাইক লাগানো হয়েছে। বিপুল লোকসমাগমের কথা মাথায় রেখে মাঠের পাশে রংপুর সরকারি কলেজের রাস্তায়ও মাইক লাগানো হয়েছে। 

রংপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন জানান, এরশাদের জানাজা কিংবা সমাহিত করার ব্যাপারে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছ থেকে এখনও কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি। চিঠি পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের এ সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি। 

এরশাদের মৃত্যুতে তার জন্মভূমি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের দিনহাটায় শোকের মাতম চলছে। এরশাদকে শেষবার দেখতে তার ভাতিজা আহসান হাবীব ছুটে এসেছেন রংপুরে। সেখানে সিটি মেয়রকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ সময় আহসান হাবীব জানান, রোববার এরশাদের মৃত্যুর খবর পৌঁছানোর পর দিনহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। সোমবারও স্কুল বন্ধ রয়েছে। এরশাদ এই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও এরশাদের কবর উন্মুক্ত স্থানে জনসমক্ষে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।