শেরপুরের রামনগর যেন পাখির রাজ্য

আইয়ুব আলী, শেরপুর উপজেলা (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৮ ১৩:১৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৬৩৬ বার।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের রামনগর গ্রাম। গ্রামটির চারপাশে রয়েছে একাধিক বড় বড় বাঁশ বাগান। এছাড়া বাগানের মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে শিমুল, কদম, পিটাহরি, মেহগনিসহ বেশ কয়েক প্রজাতির গাছ। এসব গাছের চিকন চিকন ডালগুলোয় আবাসস্থল গড়ে তুলেছে দুর্লভ প্রজাতির পাখি ‘শামুকখোল’। গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ, আমিনুল ইসরাম ও আব্দুল আলীমের সঙ্গে। তাঁরা জানান, প্রায় ছয় থেকে সাত মাস আগে পাখিগুলো এই গ্রামে এসেছে। এরপর সময়ের ব্যবধানে বাসা বেঁধেছে। ছানা তুলেছে। এখন ছানাগুলো বেশ বড় হয়েছে। 

স্থানীয়রা পাখিগুলোকে কোন প্রকার জ্বালাতন করে না। শীত পড়তেই মা পাখিসহ বাচ্চারা উড়ে এই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। তারা আরও জানান, গেল বছর পাখিগুলো এই গ্রামে আসেনি। তবে এবার দিয়ে এই গ্রামে এসব পাখি তিনবার আসলো। ঝড় হলে পাখির বাসাগুলো ভেঙে মাটিতে পড়ে যায়। এ কারণে বেশ কিছু পাখি মাটিতে পড়ে মারা  গেছে। এছাড়া ঝড়ের কারণে শিমুল গাছের একটি ডাল ভেঙে মাটিতে পড়ে মা পাখিসহ  বেশ কিছু সংখ্যক বাচ্চা মারা গেছে এবার। আর শিকারীরা আসলে গ্রামবাসির কারণে তাদের পাখি না মেরেই চলে যেতে হয়। কেননা এসব পাখির ব্যাপারে গ্রামবাসি অনেক সচেতন। এছাড়া বেশ কয়েকটি স্থানে ‘পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ’ তীর নামে শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠনের ব্যানারো ছোট আকারের সাইনবোর্ড সাটানো হয়েছে বলে তারা জানান। 

সরেজমিনে রামনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশবাগানে গাছের ডালে গড়ে তোলা আবাস্থলে শামুকখোল মা পাখি ছানাদের খাওয়ানো নিয়ে ব্যস্ত। আবার অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ডানা মেলে নিজ সন্তানের জন্য খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে যেন হয়রান হয়ে গেছে। গাছে মাথার ওপর চিকন ডালপালায় ডানা শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে যেন বিশ্রাম করছিলো। আবার মাঝে মধ্যে ডানাগুলো মেলে ধরছিলো। এভাবে কেউ গাছ থেকে উড়ে যাচ্ছিলো দূর-দিগন্তে। আবার অনেকেই নিজের আবাস্থলে ফিরছিলো। আর ছানাগুলো নিজের মত করে শব্ধ করে চলছিলো।

শামুকখোলের গায়ের রঙ ধূসর সাদা। আকারেও বেশ বড়সরো। লেজ ও পাখার শেষভাগ কালো রঙের। ভারী ঠোঁটের মাঝখানেক ফাঁক থাকে। ঠোঁটও বেশ খানিকটা বড়। শামুক এদের প্রিয় খাবার। শামুকের খোল ভাঙে  ঠোঁট দিয়ে। তারপর সেটা ওপরের দিকে তুলে ধরে। আকাশের দিকে মুখ করে গিলে  ফেলে তা। খাবার হিসেবে এরা শুধু শামুকই খায় না। মাছ, কাকড়া, ছোট ছোট প্রাণি, ব্যাঙ প্রভৃতি এদের খাবার তালিকায় রয়েছে। দেখতে অনেকটা বকের মত। তবে বক না। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই পাখিটির প্রিয় খাবার শামুক হওয়ায় এদের নাম বলা হয় শামুকখোল। এটি বাংলাদেশের আবাসিক দুর্লভ একটি পাখিও বটে। শামুকখোলের বাসা বড় হয়। একেকটা গাছে ২৫-৩০টি বাসা দেখা যায়। শুকনো ডাল, কঞ্চি ও লতাপাতার সমন্বয়ে বাসা তৈরি করে শামুকখোল। স্ত্রী-পুরষ পাখি মিলে ১০-১২ দিনে তৈরী করে বাসা। পাঁচ ফুট পর্যন্ত বাসার দৈর্ঘ্য হয়। ডিম দেয় জুলাই-আগস্ট মাসে। তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি মিলে ডিমে তা দেয়। ২৫ দিন লাগে ডিম ফুটে ছানা বেরুতে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়স হলে ছানা উড়তে শেখে বলে জানা যায়।