সাগর ডিঙিয়ে মিয়ানমার থেকে আসছে প্রচুর গরু-মহিষ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ অগাস্ট ২০১৯ ০৮:০৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮০ বার।

দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। আর এই ঈদকে সামনে রেখে আমদানিকারকরা মিয়ানমার থেকে প্রচুর গরু-মহিষ আমদানি করছেন। শুক্রবার একদিনে সাগর ডিঙিয়ে ট্রলারে করে কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে প্রায় ৩ হাজার পশু এসেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে মিয়ানমার থেকে আসা এসব পশুর ট্রলার খালাস করে পশুগুলো মাঠে রাখা হয়েছে। আবার সেগুলো বেচাকেনা হচ্ছে। এই দিন ছোট-বড় ১৫টি ট্রলারে মিয়ানমার থেকে প্রায় ২ হাজার ৯৬৪টি পশু আমদানি করেন মোহাম্মদ সোহেল, মোহাম্মদ শহিদ, আবু সৈয়দ, আবুল কাশেমসহ আরো কয়েকজন। এর মধ্যে ২ হাজার ৬২৮ গরু, বাকিগুলো মহিষ।

এর আগে সরকারের নির্দেশে ৬ আগস্ট রাতে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিন সকালে আবার মিয়ানমারের পশু আমদানিতে বাঁধা নেই বলে ঘোষণা দেয় উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া গত কয়েকদিন সাগর উত্তালের কারণে মিয়ানমার থেকে কোনো পশু আসেনি।

আমদানিকারক মোহাম্মদ সোহেল বলেন, দুইটি ট্রলারে করে শ' বেশি কোরবানি পশু এসেছে মিয়ানমার থেকে। অন্য দিনের চেয়ে দামও কিছুটা কম। আমার কাছে আসা প্রায় ৩০টি গরু, বাকিগুলো মহিষ। এসব পশু ৬২ হাজার টাকা করে বেপারীদের কাছে বিক্রি করেছি। কোরবানির আগে আরও পাঁচ শতাধিক পশু আমদানি করার কথা রয়েছে।

টেকনাফের শুল্ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ময়েজ উদ্দীন বলেন, 'একদিনে প্রায় তিন হাজার পশু এসেছে। তার বিপরীতে ১৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। কোরবানির ঈদের বাকি মাত্র এক দিন। পশু আমদানি রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ঈদ সামনে রেখে আমরা ব্যবসায়ীদের মিয়ানমার থেকে আরও বেশি পশু আনতে সহযোগিতা করছি।'

এদিকে এর আগে আগস্ট মাসের মিয়ানমার থেকে ২ হাজার ৬২৮টি পশু শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে আসে। আমদানি করা পশু থেকে ১৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এছাড়া জুলাই মাসে ১০ হাজার ৯৫ টি পশু আসে। তাছাড়া সদ্যসমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৭৫ হাজার ৫২১টি পশু। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ লাখ ২৫ হাজার ৬৭টি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৯৩৬টি পশু আমদানি হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা পশু আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সৈয়দ জানান, শুরুতে গত বছরের তুলনায় মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি কম হয়েছে। তবে কোরবানি সামনে রেখে আমদানিকারকরা পশু আমদানি বাড়াচ্ছেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি হলেও করিডোরে নেই কোনো ব্যাংক ও কাস্টমস অফিস। নেই পশু রাখার সুব্যবস্থা। এ জন্য নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমদানিকারক ও পাইকারদের।

চট্রগ্রামের গরু ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ বলেন, 'গত বছরের মতো এবারও টেকনাফ থেকে গরু কেনার জন্য এসেছি। তবে এ বছর ব্যবসা ভালো হবে না মনে হয়। কেননা, এ বছর শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে গরুর দাম চড়া। গত বছর যে গরু ৬০ হাজার টাকা ছিল, এ বছর সে গরুর দাম ৯০ হাজার টাকার বেশি।'

গরু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, কোরবানি উপলক্ষে পশু আমদানি ক্রমাগত বাড়ছে। যেসব পশু মিয়ানমার থেকে আনা হচ্ছে, সেগুলো ব্যবসায়ীরা কিনে এখান থেকে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী মিয়ানমার থেকে পশু আমদানির নিষেধাজ্ঞাতা তুলে নেওয়া হয়েছে। পশু সরবরাহের ক্ষেত্রে পথে যেন কোনো রকম চাঁদাবাজি না হয়, তা নজরে রাখা হচ্ছে।

পাশাপাশি গরুর গাড়িতে করে অস্ত্র ও মাদক যাতে কেউ বহন করতে না পারে, সে দিকটি বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সতর্ক রয়েছে বলেও জানান তিনি।