মান্দায় নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ
নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর উজান অংশ থেকে বেশ কিছুদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির মহোৎসব চলছে। ভূয়া রশিদ ব্যবহার করে নদীর উজার অংশের অন্তত ৮টি পয়েন্টে অবৈধ বালু উত্তোলন বিক্রি করছে বালু ব্যবসায়িদের অসাধু একটি চক্র। এতে স্থানীয়দের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। ঘটনায় অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, আইনী জটিলতার কারণে চলতি বাংলা ১৪২৫ সনে আত্রাই নদীর মান্দা উপজেলার উজান অংশের বালুমহাল ইজারা দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ইজারা না হওয়ায় ১লা বৈশাখ থেকে এ অংশে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ করে নদীর উজান অংশের আয়াপুর, লক্ষ্মীরামপুর ও মদনচক মৌজায় বালু উত্তোলনসহ বিক্রির মহোৎসব শুরু হয়। বালু বিক্রির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ইজারাদারের নাম ও ঠিকানা বিহীন ভূয়া রশিদ।
উপজেলার আয়াপুর গ্রামের ইব্রাহীম হোসেন, লক্ষ্মীরামপুর গ্রামের আইনাল হক ও আরজ আলী, মদনচক গ্রামের সামসুল আলম বাগা ও গোলাম মোস্তফাসহ আরও অনেকে জানান, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বালু ব্যবসায়ি মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে হাজি মোয়াজ্জেম, শাকিল আহমেদ ও আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে বেশ কিছুদিন ধরে ওইসব মৌজায় ইজারা ছাড়াই অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনা হলে অভিযান দিয়ে উত্তোলনকৃত বালুগুলো জব্দ করা হয়। কিন্ত প্রশাসনের তদারকির অভাবে বালুগুলো বিভিন্ন পয়েন্টে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে। জব্দকৃত বালুগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিলাম ডাক না দেয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ি রাতের অন্ধকারে ট্রাক্টর দিয়ে তা বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে দেন।
তারা অভিযোগ করে বলেন, আয়াপুর মৌজায় উত্তম কুমার, লক্ষ্মীরামপুর মৌজায় বাক্কার, মোজাম্মেল হক মুজাম, আফসার আলী ও বড় দুলাল, মদনচক মৌজায় ঈদুল, সিরাজ ও আজিম নদীর অন্তত ৮টি পয়েন্টে ড্রেজার স্থাপন করে বালু উত্তোলন করছে। এসব ব্যক্তিরা মোয়াজ্জেম হাজিকে ইজারাদার দাবি করে উত্তোলন কাজসহ বালু বিক্রি করে চলেছে।
ঘটনায় মান্দা উপজেলার লক্ষ্মীরামপুর গ্রামের ইমন পারভেজ বাদি হয়ে গত ১৪ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ (রাজস্ব) বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন কথিত ইজারাদার হাজি মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, বালুর চাহিদা থাকায় গত কয়েকদিন ধরে উত্তোলন ও বিক্রি শুরু করা হয়েছে। বালুমহালের এ অংশটি ইজারা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মান্দা উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম হাবিবুল হাসান বলেন, ‘বালুমহালের বিষয়টি জেলা প্রশাসন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বালুমহালটি ইজারা দেওয়া হয়েছে কিনা সঠিকভাবে আমার জানা নেই। কেউ ইজারা ছাড়াই কেউ বালু উঠালে অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার বিকেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উত্তম কুমার রায় মুঠোফোনে বলেন, এ ধরণের একটি অভিযোগ এসেছি। আইনি জটিলতার কারণে মান্দার ওই বালুমহালটি ইজারা দেওয়া হয়নি। তারপরেও কেউ বালু উত্তোলন করলে সেটা অবশ্যই অবৈধ। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় শিঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে