বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুতদের দলে চায় জঙ্গিরা: র‌্যাব

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ অগাস্ট ২০১৯ ১৫:৫৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০১ বার।

জঙ্গি কার্যক্রমে অভিযুক্ত 'আল্লাহর দল' নামে একটি সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমিরসহ চার সদস্যকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব বলছে, সংগঠনটি বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত সদস্যদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টায় ছিল। সশস্ত্র সংঘাত ও নাশকতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে উৎখাত করে উগ্রবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য। খবর সমকাল অনলাইন 

রোববার রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে ওই চারজনকে গ্রেফতার করে। পরে সোমবার কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।

গ্রেফতার চারজনের মধ্যে পাবনার বাসিন্দা ইব্রাহীম আহমেদ হিরু (৪৬) আল্লাহর দলের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সাংগঠনিকভাবে এর আমিরকে 'তারকা' বলা হয়। অপর তিনজনের মধ্যে আবদুল আজীজ (৫০) অতিরিক্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংগঠনটির অর্থ সংক্রান্ত বিষয়টি দেখভাল করতেন। শফিকুল ইসলাম সুরুজ (৩৮) ঢাকা জেলার 'নায়ক' এবং রশিদুল ইসলাম (২৮) কুড়িগ্রাম জেলার 'নায়ক' ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে উত্তরাঞ্চলের জঙ্গি মতিন মেহেদী ওরফে মুমিনুল ইসলাম ওরফে মতিন মাহবুব 'আল্লাহর দল' গঠন করেন। ২০০৪ সালের শেষের দিকে জঙ্গি সংগঠনটি জেএমবির সঙ্গে একীভূত হয়। দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় মামলায় জেএমবির নেতৃত্বে স্থানীয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের সদস্য গ্রেফতার হলে সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়ে। ওই সময়ে মতিন মেহেদীর গ্রুপটি জেএমবি ছেড়ে নিজেরাই সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। এরপর নানা অভিযানে আল্লাহর দলের সদস্যরা গ্রেফতার হয়। ২০০৭ সালে মতিন মেহেদীকে গ্রেফতারের পর সংগঠনটি নিষিদ্ধ করার আলোচনা চললেও তা আর হয়নি। ২০১৪ সালে সংগঠনটি কৌশল পাল্টে নিজেদের দলের নাম রাখে 'আল্লাহর সরকার।'

র‌্যাব বলছে, দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর বা বাহিনীর অবকাঠামোর মতো জঙ্গি সংগঠনটির কাঠামোও বিন্যস্ত করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরিকল্পনা ছিল। নেতৃত্ব বিন্যাস অনুযায়ী বিভাগ পর্যন্ত 'নায়ক' উপাধির মাধ্যমে প্রধানদের চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদকে অধিনায়ক, উপ-অধিনায়ক, অতিরিক্ত অধিনায়ক, যুগ্ম অধিনায়ক এবং সর্বোচ্চ পদকে তারকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

সোমবার সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, আল্লাহর দলের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ঝামেলা এড়াতে এরা বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত সদস্যদের দলে ভেড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল। পিলখানা ঘটনায় চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদেরও দলে ভেড়নোর চেষ্টায় ছিল। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির কারণে জঙ্গি সংগঠনটির এই কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।

তিনি বলেন, সশস্ত্র সংঘাত ও নাশকতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে উৎখাত করে উগ্রবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছে ছিল সংগঠনটির। এরা ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সদস্য রিক্রুটের চেষ্টায় ছিল। সংগঠনের সদস্যরা জঙ্গি মতিন মেহেদীকে আমির মেনে বায়াত বা শপথবাক্য পাঠ করার মাধ্যমে দলে অন্তর্ভুক্ত হয়। ফিল্মি স্টাইলে তাদের তারকা (আমির) জঙ্গি মেহেদী মতিনকে কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল। এ জন্য প্রিজনভ্যানে হামলা করে মুক্ত করার পরিকল্পনাও করে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, এই দলের জঙ্গি সদস্যরা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে। ধর্মীয় রীতিনীতি ভিন্নভাবে পালন করে। তারা বর্তমান পরিস্থিতিকে একটা 'যুদ্ধাবস্থা' মনে করে ঈদ, কোরবানি বা হজের মতো ফরজ ধর্মীয় রীতিগুলো পালন করে না। তাদের বিবেচনা অনুযায়ী 'যুদ্ধাবস্থা' হওয়ায় জুমার নামাজও আদায় করে না। এমনকি প্রতি ওয়াক্তের নামাজ মাত্র দুই রাকাত আদায় করে। তারা জামাতে নামাজ আদায় করে না। এমনকি ইসলামের কালেমার সঙ্গে শেষ নবী ও রাসূলের নাম যুক্ত করার ক্ষেত্রে এদের ভিন্নমত রয়েছে।

গ্রেফতার হওয়া ইব্রাহীম আহমেদ হিরু উচ্চ মাধ্যমিক পাস। পেশায় একজন মোটর পার্টস ব্যবসায়ী। ১৯৯৭ সালে মাহমুদ ওরফে ভাগিনা মাহমুদের মাধ্যমে আল্লাহর দলে যুক্ত হন। আবদুল আজীজ গাইবান্ধার একটি কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে উগ্রবাদে যুক্ত হন। শফিকুল ইসলাম সুরুজ পাবনার একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস। চলতি বছরেই তিনি সংগঠনটির ঢাকা জেলা নায়কের দায়িত্ব পান। একটি কম্পিউটার দোকানের কর্মচারী রশিদুল ইসলাম নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। গত চার বছর ধরে তিনি কুড়িগ্রাম জেলা নায়ক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।