নিরাপদ সড়কের দাবিতে উত্তাল বগুড়ার জিরো পয়েন্ট: শিক্ষক, অভিভাবক এবং ছাত্রলীগ নেতাদের একাত্মতা
মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদঃ
নিরাপদ সড়কের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ার রাজপথে বিক্ষোভ দেখিয়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শহরের জিরোপয়েন্ট সাতমাথা বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ারে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে বেলা ১১টা থেকে প্রায় এক ঘন্টা ধরে বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভকারীরা একটু পর পরই ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এবং ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে শ্লোগান দেয়। এতে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো জিরোপয়েন্ট এলাকা। এ সময় ওই এলাকায় যানবাহনের গতি কমে যায়। ফলে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভ চলা অবস্থায় বিক্ষুব্ধ কিছু শিক্ষার্থী স্টেশন রোডে ছুটে গিয়ে কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে।
বিক্ষোভ চলাকালে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাতমাথায় অবস্থান করলেও তাদেরকে শান্ত দেখা গেছে। তবে কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেলফি তুলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছবি তুলে লিখেছেন ‘পুলিশ আন্দোলনকারী ভাই ভাই নিরাপদ সড়ক চাই।’ বিক্ষোভ কর্মসূচী চলাকালে শিক্ষক, অভিভাবক এবং ছাত্রলীগ নেতাদেরকে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তৃতা করতে দেখা যায়।
ঢাকার কুর্মিটোলায় গত রোববার একটি বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ দিন ধরেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের ফাঁসি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালনা বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বগুড়ায় বিক্ষোভ দেখানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই একে একে শিক্ষার্থীরা সাতমাথায় জমায়েত হতে শুরু করে। তবে এর আগেই বিপুল সংখ্য পুলিশ সাতমাথা এলাকায় অবস্থান নেয়। বেলা ১১টা নাগাদ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের কয়েক শ’ শিক্ষাথী সাতমাথার বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার চত্বরে জমায়েত হয়। তাদের প্রায় সবার পরণে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম বা ড্রেস ছিল। সমাবেশ থেকে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এবং ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে ঘন ঘন শ্লোগান দেওয়া হয়।সমাবেশ থেকে বিক্ষোভকারীরা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের ফাঁসি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালনা বন্ধ করাসহ ৯ দাফী উত্থাপন করেন। তারা জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে তাদের এই আন্দোলন অরাজনৈতিক।
বিক্ষোভ চলাকালে সেখানে উপস্থিত হন বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়য়ের প্রধান শিক্ষিকা রেবেকা খাতুন। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবী আদায়ের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘সন্তান বাইরে থাকলে মায়ের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। তারা আদৌ ফিরতে পারবে কি না? তাই একজন মা হিসেবে তিনি আর কোন মায়ের সন্তান হারানোর আর্তনাদ শুনতে চান না। সমাবেশে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে মারিয়া রহমান নামে এক আইনজীবী বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি তার দু’টি মেয়েসহ সব ছেলে-মেয়ের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানান।বিক্ষোভ চলাকালে ছাত্রলীগ বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে আমরাও রয়েছি। তবে তোমাদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচী পালন করতে হবে।’
বগুড়ায় পুলিশের মিডিয়া বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, স্কুল- কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ উস্কানিমূলক শ্লোগান দিয়ে পরিস্থিতিতে অশান্ত করার চেষ্টা করেছে। তবে পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্য্য নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সেলফি তোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র বড় বোন ২০০১ সালের ৮ ডিসেম্বর সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। স্বজন হারানোর ব্যাথা আমিও বুঝি। তাই শিক্ষার্থীদের মত আমিও নিরাপদ সড়ক চাই।’