ধর্মান্তরিত যুবক জঙ্গী দলেঃ বগুড়ায় জেএমবির ২ কমান্ডারসহ ৫ সদস্য অস্ত্রসহ গ্রেফতার

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট:
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯২৫ বার।

জঙ্গীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন ধর্মান্তরিত এক যুবক।  ৩৩ বছরের ওই যুবকের নাম আতিকুর রহমান।  পূর্বে তার নাম ছিল শ্রী সৈকত কুমার।  বাড়ি রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার আস্করপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের উৎপল হাজরার ছেলে।   রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনকারী ওই যুবক ঠিক কবে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবিতে যোগ দিয়েছেন, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।  
নওমুসলিম আতিকুর রহমান প্রায় এক বছর আগে জেএমবির অপর দুই সহযোগীর সঙ্গে রাজশাহীর মতিহার এলাকায় রহমান জুট মিলে ডাকাতি করে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা লুট করেন। আর এবার জেএমবি'র দুই সামরিক কমাণ্ডার এবং অপর ২ সহযোগীর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় নাশকতার পরিকল্পনায় মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।  কিন্তু তার আগেই পুলিশ ধরে ফেলে তাদের। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাত দেড়টার দিকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর এলাকায় রানীরহাটগামী পাকা রাস্তার মোড়ে একটি দোকানের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বুধবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, গ্রেফতার জঙ্গীরা উত্তরাঞ্চলে জেলাগুলোতে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল।  তাদের কাছ থেকে ২টি বিদেশী পিস্তল, ১০ রাউন্ড তাজা গুলি, ৩টি অত্যাধুনিক বার্মিজ চাকু এবং ১ জোড়া হ্যান্ডকাফ উদ্ধার করা হয়েছে।   জিজ্ঞাসাবদের জন্য তাদের ৩দিনের রিমাণ্ডে নেওয়া হয়েছে।  

যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলোঃ পুরাতন জেএমবি’র রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ইছাবা বা সামরিক শাখার প্রধান জামালপুরের বড়ইকুডা গ্রামের মৃত লোকমার আলীর ছেলে শহিদুল্লাহ্ ওরফে মাসুম (৪১), রাজশাহী বিভাগের সামরিক বিভাগের কমান্ডার ওই জেলার বেলপুকুর থানার ক্ষুদ্র জামিরা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে বুলবুল ওরফে সোহাগ (৩২), সামরিক শাখার সদস্য রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার আস্করপুর গ্রামের শ্রী উৎপল হাজরার ছেলে ধর্মান্তরিত নবমুসলিম আতিকুর রহমান ওরফে সৈকত (৩৩), পার্শ্ববর্তী আশকোরপুর গ্রামের মৃত আবু তালেবের ছেলে মিজানুর রহমান ওরফে দর্জি মিজান (৩৫) ও রাজশাহী মহানগীর বেলপুকুরিয়া থানার ক্ষুদ্র জামিরা এলাকার একরামুল হকের ছেলে মাসুদ রানা (৩১)।এর আগে গত ২৯ জুলাই রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর দূর্গম চর বাগডহড়া থেকে পুরাতন জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের ৪ নেতাকে ভারী আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। তখন আরও পাঁচ জঙ্গী পালিয়ে যায়। তার পাঁচ দিনের মাথায় ৩ আগস্ট গভীর রাতে কুড়িগ্রামের দুর্গম চরাঞ্চল থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ ৩ আরও জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। তবে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার হওয়া পাঁচ জঙ্গী ২৯ জুলাই রংপুরে অভিযানকালে পালিয়ে যাওয়া সেই পাঁচ জঙ্গী কি’না সে বিষয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন নি।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পুরাতন জেএমবি’র বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক খোরশেদ আলম ওরফে মাস্টারের নির্দেশে গ্রেফতার ওই পাঁচ জঙ্গী গত ৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনায় গিয়েছিল। সেখানে খোরশেদ আলম ওরফে মাস্টারের সঙ্গে আগে থেকেই হাসান আলী ওরফে ইশা এবং সাদেকুল ইসলাম ওরফে ওমায়ের নামে আরও দুই জঙ্গী উপস্থিত ছিল। সেখানে তারা সাংগঠনিক বৈঠক করে এবং উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে সামরিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর উদ্ধার করা অস্ত্র এবং গুলি ওই পাঁচ জঙ্গীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঁঞা জানান, গ্রেফতার পাঁচ জঙ্গী মঙ্গলবার গভীর রাতে বগুড়ার শেরপুরে আসে। এরপর তারা তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য উপজেলার মির্জাপুর এলাকায় রানীরহাটগামী পাকা রাস্তার মোড়ে জনৈক সুলতানের দোকানের সামনে নিজস্ব যানের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু তারা সেখান থেকে অন্যত্র যাওয়ার পূর্বেই পুলিশ সদর দপ্তর এবং বগুড়া গোয়োন্দা শাখার একটি দল সেখানে গিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। বগুড়ায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, গ্রেফতার পাঁচ জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানী শেষে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জানান, গ্রেফতার পাঁচ জঙ্গীর মধ্যে বুলবুল, আতিকুর রহমান, মাসুদ রানা এবং মিজানুর রহমান প্রায় এক বছর আগে রাজশাহী জেলার মতিহার এলাকায় রহমান জুট মিলে ডাকাতি করে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা লুট করেছিল। ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর সংঘটিত ওই ডাকাতি মামলায় গ্রেফতারের পর তারা প্রত্যেকেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছিল।
গ্রেফতার পাঁচ জঙ্গীর মধ্যে দু’জন উচ্চ শিক্ষিত। এর মধ্যে আতিকুর রহমান ওরফে সৈকত ২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন। মাসুদ রানা ২০১৩ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে প্রিভিয়াস মাস্টার্স করেন। জেএমবি’র রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সামরিক কমান্ডার শহিদুল্লাহ ১৯৯২ সালে এসএসসি পাশ করেছেন। তবে সংগঠনের রাজশাহী বিভাগের কমান্ডার বুলবুল ওরফে সোহাগ ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে নার মিজানুর রহমান ওরফে দর্জি মিজানের কোন অক্ষর জ্ঞান নেই।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, আতিকুরই প্রথম ধর্মান্তরিত প্রথম জঙ্গী নন।   ইতিপূর্বে ঝিনাইদহসহ কয়েকটি জেলায় তার মত কয়েকজনকে পাওয়া গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গীরা জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় তাদের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। নির্বাচনের আগে কিংবা নির্বাচনের সময়ে দেশে বড় ধরনের কোন নাশকতার পরিকল্পনা জঙ্গীদের রয়েছে কি’না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদিও সুনির্দিষ্টভাবে এটা এখনও জানা যায়নি। কিন্তু আমরা সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক রয়েছি।’ তিনি ২০১৫ সালে দেশে জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পর ২০১৫ সালে জঙ্গীরা তৎপর হওয়ার চেষ্টা করেছিল। এবারও তারা সেরকম কিছু করার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে। কিন্তু তারা সফল হবে না।’