যেভাবে বিসিএস-এ প্রশাসনে ক্যাডার হলেন বগুড়া আ. হক কলেজের নাহিদ

মেহেরুন্নেছা ইতি
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২২ ২০:৪২ ।
বিশেষ
পঠিত হয়েছে ৪৯৫৭ বার।

কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সফল হয়েছেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরামুল হক নাহিদ। তিনি ৪০তম বিসিএস এর প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

 

জন্মস্থান বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ধামাহার গ্রামে। স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে। 

 

পিতা ইকবাল হোসেন পেশায় কৃষক, মাতা নাহার আক্তার গৃহিনী। ইকরামুল হক নাহিদের কাঁটাযুক্ত পথ আটকে রাখতে পারেননি তার সাফল্য। তার সাফল্যের কথা ও পরামর্শ তুলে ধরেছেন পুণ্ড্রকথার স্টাফ রিপোর্টার মেহেরুন্নেছা ইতি।

 

আপনার শৈশব-কৈশোর কিভাবে কেটেছে?

 

আমার শৈশব কেটেছে শিবগঞ্জ উপজেলার ধামাহার গ্রামে। আর দশটা ছেলের মতোই আমার ছেলেবেলা কেটেছে আমার দূরন্তপনায়। কৃষক বাবা, গৃহিণী মায়ের সাথেই আমার জীবনের শ্রেষ্ট সময়গুলো কেটেছে। ছোট বেলা থেকেই খুব ভাল ক্রিকেট খেলতাম। ক্রিকেটের প্রতি আমার একটা নেশা ছিল। কিন্তু গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। তাই বড় হওয়ার সাথে সাথে আমার স্বপ্নটাও পরিবর্তিত হয়েছে। সেই সাথে জীবনে টিকে থাকার জন্য কঠোর সংগ্রাম আমাকে সাফল্য এনে দিয়েছে।

 

বিসিএস-র স্বপ্নের সূচনা কবে থেকে হয়েছিল?

আমার বিসিএস এর স্বপ্নটা কলেজ জীবনেই শুরু হয়। আমি প্রথমে ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষিতে টিকে থাকার লড়াইয়ে স্বপ্নটার পরিবর্তন হয়। তারপর আমি কলেজ জীবন থেকেই কঠোর অধ্যয়ন শুরু করি। যার ফলে সহজেই সাফল্য ধরা দেয়।  

 

বিবিএস বা প্রফেশনাল জীবনে আসার জন্য সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন কে?

 

আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলো আমার বাবা-মা। বাবা মার জন্যই আজ আামি এই পর্যন্ত এসেছি। তারপর আমার শিক্ষক ও সহপাঠীরা। এছাড়াও আমি সফল মানুষদের জীবনী পড়তাম। যা আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।

 

জীবনে কতবার ব্যর্থ হয়েছেন?

 

মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সেভাবে ব্যর্থ হইনি। জীবনে প্রথম সাব ইন্সপেক্টর(এসআই) পদে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হই। এক বছর ট্রেনিং শেষ করে দুই মাস চাকরি করি। এরপর ৩৮তম বিসিএসে নন ক্যাডারে টেকনিক্যাল স্কুলে ৬ মাস ধরে চাকরি করছি। বর্তমানে ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।

 

আপনার কাছে বিসিএস ক্যাডার হতে হলে কোন বিষয়গুলো ত্যাগ করা উচিত বলে মনে হয়?

 

প্রথমেই বলবো আড্ডা, ঘোরাফেরা বন্ধ করে পড়াশুনায় ডুব দিতে হবে। আমি কোচিং করিনি। বাসায় নিজে নিজে পড়েছি। আর টিউশন ও প্রাইভেট পড়ার সময় ছাড়া বাকি সময় আমি আমার রুমে বসে পড়েছি। এমনকি কোন আত্মীয় স্বজনদের বাসায় যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলাম। অন্য সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে গেলে সফলতা আসবেই।

 

আপনি বিসিএস এর জন্য কিভাবে পড়াশোনা করতেন?

 

আমি প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসতাম। আমার টিউশন এবং প্রাইভেট বাদে সারাক্ষণ পড়ার মধ্যে ডুবে থাকতাম। কখনও গল্পের বই, পত্রিকা, আবার কখনো চাকরির পড়াশুনা। তবে যেটাই পড়তাম মনযোগ সহকারে পড়তাম। বিসিএস-এ পড়াশোনার বিকল্প নেই।

 

আপনার অনুজদের জন্য আপনার কি পরার্মশ থাকবে?

 

একটা কথাই বলবো- বর্তমানে একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে যে আমাকে ক্যাডার হতেই হবে। তবে আমার কথা ক্যাডার হওয়াই চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। ভাল মানুষ হতে হবে। এর পাশপাশি নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

 

পরিবার ও আপনার অনুভূতি কেমন?

 

পরিবারের স্বপ্ন ছিল আমি যেন প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হই। আলহামদুলিল্লাহ্‌ , পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমি অনেক খুশী। ভবিষ্যতে সবসময় চেষ্টা থাকবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করার।