বগুড়ায় মাদক উদ্ধারে তৎপর পুলিশ, কৌশল বদলাচ্ছে ব্যবসায়ীরা

অরুপ রতন শীল
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২২ ১২:০০ ।
বিশেষ
পঠিত হয়েছে ১১৫ বার।

প্রায় প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছেন মাদক কারবারি ও মাদকসেবীরা। উদ্ধার হচ্ছে মাদকদ্রব্যও। তারপরও বগুড়ায় ঠেকানো যাচ্ছে না মাদকের বিস্তার। গত মে মাসে জেলায় প্রায় ৪৮ লাখ টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত ২৮৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কৌশল পাল্টানো ও অধিকাংশ আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও এই পেশায় ফিরে আসায় ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। 

 

জেলা পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মে মাসে পুলিশের অভিযানে ৬৮ কেজি ৪৪০ গ্রাম গাঁজা, ৪২৯ বোতল ফেন্সিডিল, ১২৪ দশমিক ৫ গ্রাম হেরোইন, ৫ হাজার ৭২২ পিচ ইয়াবা, ১১০ লিটার চোলাই মদ, ৩৫৯ পিচ ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট এবং ২ হাজার ৮৬৭ পিচ এম্পুল উদ্ধার করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য আনুমানিক ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯০ টাকা। এ ঘটনায় ২০৪ মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ২৮৫ মাদক ব্যবসায়ী।


 
প্রতি মাসে পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান চললেও কৌশল বদলে এখনও মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে সদর থানা এলাকায়। এই এলাকায় দুই শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে যাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই নারী। খোঁজ নিয়ে জানা  গেছে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের পরিবারের সকল সদস্যরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদক কেনা-বেচার সাথে জড়িত। 

 

অনুসন্ধান বলছে, শহরের জহুরুলনগর, পুরাণ বগুড়া, তিনমাথা, সেউজগাড়ী, মালগ্রাম, চেলোপাড়া, হাকিড় মোড়, সুলতানগঞ্জপাড়া, চকসূত্রাপুর, বাদুরতলা, হাড্ডিপট্টি এলাকায় এখনও মাদক সহজেই পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা পুলিশের ভয়ে কৌশলে ভ্রাম্যমাণভাবে মাদক বিক্রি করছে। মুঠোফোনের মাধ্যমে তারা ক্রেতাদের থেকে মাদকের অর্ডার নিচ্ছেন এবং স্থান পরিবর্তন করে সেগুলো সরবরাহ করছেন। এছাড়া তারা নিজ নিজ বাড়িতেও মাদক রাখছে না। ফলে মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও তেমন সুফল মিলছে না। 

 

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অনেক মাদকসেবী মাদক গ্রহণের টাকা সংগ্রহের জন্য জড়িয়ে পড়ছেন মাদক ব্যবসায়। এ ছাড়া অন্য যেকোনো ব্যবসার চেয়ে মাদক কারবার অনেক লাভজনক হওয়ায় এবং রাতারাতি অনেক টাকা আয়ের সুযোগ থাকায় অনেকেই এ কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই একবার কেউ গ্রেপ্তার হলে জামিনে মুক্ত হয়ে আবার মাদক কারাবারে ফিরে আসছেন। এমনকি অধিকাংশ মাদকসেবী মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন।  


বগুড়া সদর থানার ওসি সেলিম রেজার দাবি, 'বগুড়া শহরে আগের মত নির্দিষ্ট করে মাদকের কোন স্পট নেই। এখন মাদক ব্যবসায়ীরা ভ্রাম্যমাণভাবে মাদক বিক্রি করছে। তবে তারা যতই কৌশল অবলম্বন করুক না কেন মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর।' 

 

বগুড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রাজিউর রহমান বলেন, 'আমি সম্প্রতি বগুড়ায় এসেছি। যোগদানের পরপরই মাদকের কেনাবেচা রোধে বিভিন্ন কর্মশালা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি করেছি। তবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বগুড়াকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব বলে তিনি দাবি করেন।' 

 

বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন,' বগুড়ায় মাদক নির্মূলে জেলা পুলিশ সব সময় কঠোর।  মাদকদ্রব্য কোথা থেকে আসছে আমরা এখন সেই উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে জেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হয়েছে। তালিকা ধরে ধরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।'

 

পুলিশ সুপার জানান, গত মে মাসে তালিকাভুক্ত ১০০ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের কৌশলের সাথে সাথে পুলিশও কৌশল অবলম্বন করে তাদের গ্রেফতার করছে। 

 

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে জানানো হবে।‘