বগুড়ায় চাহিদার চেয়ে বেশি রয়েছে কোরবানি পশু, তবে দাম চড়া

অরুপ রতন শীল
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২২ ১৩:০৬ ।
বিশেষ
পঠিত হয়েছে ৯৯ বার।

বগুড়ার কৃষক ও খামারিরা আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিক্রির জন্য ৪ লাখ ২৭ হাজারের বেশি পশু প্রস্তুত রেখেছেন। প্রতি বছরের মতো এবারও তারা হরমোন ইনজেকশন বা কোনো প্রকার রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ না করে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করেছেন। এ বছর গো-খাদ্যের দাম চড়া হওয়ায় পশু পালনে খরচ একটু বেশি হচ্ছে। ফলে, পশুর দাম আগের চেয়ে বেশি হবে। তবে, ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু এলে এবার ভালো দাম পাবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

 

এ বছর বগুড়ার খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশু আছে চাহিদার চেয়েও বেশি। তাই, কোরবানির জন্য পশু আমদানির প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

 

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট ৪ লাখ ২৭ হাজার ২শ’ ৯৫টি গবাদি পশু কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন। এ বছর জেলায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩শ’ ৭৫টি। চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯শ’ ২০টি।

 

এর মধ্যে সদর উপজেলায় (৩৪২০ জন খামারি) ৪৪ হাজার ৯৩৯টি, গাবতলীতে (৩০৩৯ জন খামারি) ৪০ হাজার ৩৯৩টি, সারিয়াকান্দিতে (৪৪৪৩ জন খামারি) ৩৮ হাজার ৮০৭টি, সোনাতলায় (৩৭৭৮ জন খামারি) ২৯ হাজার ১৮৮টি, শিবগঞ্জে (৪৪৬০ জন খামারি) ৪৩ হাজার ৮৪৫টি, কাহালুতে (২৪৯৬ জন খামারি) ৩৫ হাজার ৩১২টি, দুপচাঁচিয়ায় (৫৬৩০ জন খামারি) ৩২ হাজার ১৯৭টি, আদমদীঘিতে (২৪৩৪ জন খামারি) ৩০ হাজার ৬২টি, নন্দীগ্রামে (২২৬০ জন খামারি) ২৪ হাজার ৩৫৭টি, শেরপুরে (৫৩০৪ জন খামারি) ৪১ হাজার ১৮০টি, ধুনটে (৩৮৪৪ জন খামারি) ৩৭ হাজার ৭০৫টি এবং শাজাহানপুর উপজেলায় (৪৯০৭ জন খামারি) ২৯ হাজার ৩১০টি গবাদিপশু রয়েছে।

 

এ পশুগুলোর মধ্যে গরু (ষাঁড়, বলদ ও গাভি) ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭শ’ ৯৮টি, মহিষ ১ হাজার ৭শ ৩৩টি, ছাগল ১ লাখ ২৯ হাজার ৫শ’ ৩৮টি এবং ভেড়া ২৮ হাজার ২শ’ ২৬টি। গেল ঈদে এ জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পশু জবাই করা হয়।

 

খামারিরা জানান,  প্রতিবছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তারা। ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি কৃষকরাও ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকেন। চলতি বছর পশুখাদ্যের দাম ও শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ অনেক বেড়েছে। তাই, পশুপালন খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। সেজন্য অনেক খামারি পশু মোটাতাজাকরণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

 

তারা জানান, এক বস্তা ভূসির দাম ১ হাজার ৭৫০ টাকা। খড়ের আঁটি ১২ থেকে ১৫ টাকা। একটি গরু হৃষ্টপুষ্ট করতে হলে অন্তত ৬ মাস লালন-পালন করতে হয়। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরুও বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু, এতে গরুর দাম মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। তাই, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।

 

সূরা এগ্রো ফার্মসের মালিক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আমাদের খামারে দেশীয় জাতের ৫০টি গরু পালন করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। তবে, এ বছর গরু পালনের খরচ বেশি হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি কী হয়,  এ নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছি।’


এক বস্তা ভূসির দাম ১ হাজার ৭৫০ টাকা। খড়ের আঁটি ১২ থেকে ১৫ টাকা। একটি গরু হৃষ্টপুষ্ট করতে হলে অন্তত ৬ মাস লালন-পালন করতে হয়। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরুও বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু, এতে গরুর দাম মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। তাই, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।

 

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. শহিদুল ইসলাম, মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে দেশীয় খাবার খাইয়ে পশু মোটাতাজা করার জন্য কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাজারে দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি থাকায় আশা করছি, খামারি ও কৃষকরা লাভবান হবেন।’